‘হিজড়ে’ সুলতান এবং ইতিহাসের ‘বিব্রত’ আদমেরা!
শিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে প্রথম বয়ানের ক্রেডিট পেয়ে থাকেন বুদ্ধিজীবী ও লেখক আহমদ ছফা। এরপরে যাঁরা সুলতানকে নিয়ে বয়ান করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হাসনাত আবদুল হাই এবং বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। সুলতানের শিল্পকর্মের তাত্ত্বিক-কাঠামো এবং জনপ্রিয়তা নির্মিত হয়েছে তাঁদের লেখনীতেই। পরে অনেক লেখা সুলতানকে নিয়ে হলেও মূলত এই তিনজনের বক্তব্যের সারকথনই অনুসৃত হয়েছে। আরও সংক্ষেপে বলা যায়, আহমদ ছফার দৃষ্টিভঙ্গিটিই সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত সৈয়দ নিজারের ‘ভারতশিল্পের উপনিবেশায়ন ও সুলতানের বি-উপনিবেশায়ন ভাবনা’ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে।
এই নির্মিতির মূল বক্তব্য—উপনিবেশবিরোধী তথা ঔপনিবেশিক ক্ষমতার শোষণবিরোধী সুলতানের অবস্থান। এই অবস্থান স্থান-কাল-পাত্র সাপেক্ষ নয়, বরং নৈর্ব্যক্তিক। এই অবস্থানটিই দৃশ্যরূপ পেয়েছে সুলতানের পেশিবহুল কৃষকসমাজের শরীরে।
দুটি বিষয় লক্ষণীয়, প্রথমত প্রত্যেক শিল্প-বয়ানকারী কৃষকের কোনো একক ব্যক্তিসত্তা নয়, গুরুত্ব দিয়েছেন একটি সমাজ বা সামষ্টিক চেতনাকে, যা তারা সুলতানের কাজে আবিষ্কার করেছেন একটি মহতী সমাজ-নির্মাণের সম্ভাবনার সূচক হিসেবে।
দ্বিতীয়ত, ঔপনিবেশিক শাসনক্ষমতার সূচক। সেই ক্ষমতার বিপরীতে সুলতানের ক্ষমতা-ধারণাকে তাঁরা উন্মোচন করেছেন পেশিবহুল কৃষাণের বয়ানে। এই ক্ষমতাকে একটি উপনিবেশবিরোধী ক্ষমতাকাঠামোর বয়ান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই বয়ান কমবেশি জয়নুল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পীদের কাজের মধ্যে খোঁজার প্রয়াস শিল্প-বক্তাদের বয়ানে প্রধান প্রবণতা হিসেবে কাজ করেছে। অর্থনৈতিক শ্রেণিচেতনা থেকে উৎসারিত এই প্রবণতাই বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসকে একটি মহতী একমুখী পিরামিডীয় স্তম্ভের মতো দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
এস এম সুলতানের প্রতিকৃতি © শিল্পকর্ম: মুর্তজা বশীর [শিল্পকলা একাডেমির অ্যালবাম থেকে]
এই যে দেখার উপায়, তার একটি সময়োপযোগী প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চয়ই আছে, যা বয়ানকারীদের মনস্তত্ত্ব বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। চার স্তম্ভ নির্দেশিত রাষ্ট্রনীতির স্বরূপের মধ্যে তার প্রাসঙ্গিকতা খোঁজার সুযোগ আছে। তবে স্বল্প পরিসরে এই লেখার উদ্দেশ্য বক্তাদের মনস্তাত্ত্বিক প্রাসঙ্গিকতা অন্বেষণ নয়, বরং তাদের আলোচনার ধরনের মধ্যে সুলতানের সত্তার প্রকরণ কীভাবে ঔপনিবেশিক তথা পুরুষালি ক্ষমতা মনস্তাত্ত্বিক একমুখী বয়ানের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে একটি বাইনারি প্রক্রিয়ায় তা বোঝার চেষ্টা করা। এবং বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসের একমুখী বয়ান তৈরির যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রবণতা এর মধ্য দিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাকে বিবেচনায় আনা।
প্রশ্ন হলো, সুলতানের ব্যক্তি ও শিল্পসত্তা কি সমাজ ও রাষ্ট্রমুখী? তা বোঝার উপায় আহমদ ছফার ভাষ্যেই পরিষ্কার আছে।
“কবিকে যাবে না পাওয়া জীবন-চরিতে”—রবীন্দ্রনাথের এই ছন্দিত বাক্য কবির বেলায় সত্য হতেও পারে। কিন্তু কবিকে পাওয়া যাবে কোথায়? সহজ উত্তর: কবিতায়। কিন্তু কবিতায় যেটুকু পাওয়া যায়। অর্থাৎ কবির প্রাণ- পাতালের আলো, আঁধারের ঝিকিমিকি—সেই চিন্ময় প্রাপ্তিতে মন যখন বশ মানে না, বুদ্ধি সন্তুষ্ট হতে চায় না, বাকিটুকু খুঁজতে হবে কোথায়? তারও সহজ উত্তর: জীবনে।
এই পথেই আহমদ ছফা শেখ মুহম্মদ সুলতানের জীবন-অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর শিল্পকর্মের বোঝাপড়াটি আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন। সুলতানের পারিবারিক অবস্থা, শিল্প এবং ভ্রমণ অভিজ্ঞতা গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষিত হয়েছে তাঁর ‘বাংলার চিত্র ঐতিহ্য: সুলতানের সাধনা’ প্রবন্ধে। অভিজ্ঞতানির্ভর বিশ্লেষণটিকে দুটি স্তরে চিহ্নিত করা যেতে পারে—
প্রথম অংশ: চার স্তম্ভবিশিষ্ট নতুন রাষ্ট্রের অনুগামী। শ্রেণিচেতনা এবং সেক্যুলার ভাবনায় সিক্ত।
দ্বিতীয় অংশ: সুলতানের একান্ত ব্যক্তিসত্তা। যা সমাজবিরোধী, যা নিয়ত সচল এবং স্ব-ভাবে চালিত, যা তৎকালীন উদীয়মান নতুন রাষ্ট্রের লৈঙ্গিক বাইনারি অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক।
প্রথম বৃক্ষ রোপন: এস এম সুলতান [শিল্পকলা একাডেমির অ্যালবাম থেকে]
প্রথম অংশটি ছফা উদযাপন করেছেন এবং প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন। দ্বিতীয় অংশটিকে ‘সাধনা’র অন্তরালবর্তী উপায় হিসেবে বিবেচনা করে নিয়েছেন অস্বস্তির সাথে। সজোরে ঘোষণা করেননি। বিধবার কামনাকে অস্বীকার করে ‘সতী’ নির্মাণের সামাজিক প্রকরণের মতোই সুলতানের ব্যক্তিসত্তাকে অস্বীকার করা হয়েছে। স্বীকার করা হলে কী হতে পারত, তা ভিন্ন প্রসঙ্গ। ছফার দ্বিতীয় অংশের নির্মিতি বোঝার জন্য কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা প্রয়োজন—
পুত্র-কন্যা-স্ত্রী, সংসারহীন একেবারে একাকী একজন প্রাকৃতিক মানুষ।
অথবা
পরিবারের মায়া, বংশধারার মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে প্রবাহিত করার স্বাভাবিক জৈবিক আকাঙ্ক্ষা ভেতর থেকে ছেঁটে দিয়ে, এই চিত্র-সন্তান জন্ম দেয়ার একাগ্রপ্রায় কাপালিক সাধনায় নিযুক্ত থাকতে হয়েছে সারাজীবন।
ইতিহাস যাকে মনোনীত করেন, অনেক দুঃখ নিয়েই যোগ্য করে তোলেন।
‘একাকী’, ‘প্রাকৃতিক মানুষ’, ‘বংশধারা’, ‘কাপালিক সাধনা’ ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগে সুলতানের ব্যক্তিসত্ত্বা বিশেষ রূপ নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। অথচ সুলতানের শিল্প-বিশ্লেষণে তার আঁচ লাগে না। যদিও ছফার বক্তব্যেই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে সুলতানের ব্যক্তিক সত্তাকে না জানার বিষয়টি—
...কখনো ঘর বাধার স্বপ্ন এ ঘরছাড়া মানুষটির মনে ঘনিয়ে এসেছিল কিনা, সে অন্তর্গত সমাচার দেয়া রীতিমত দুঃসাধ্য। সুরমা আঁকা কাজলটানা কোনো রমনীর ব্রীড়াভঙ্গি তাকে চঞ্চল এবং উতলা করেছিল কিনা, তা বলতে পারব না।
তাহলে ছফা শিল্পীর ‘জীবন’ বলতে কত দূর যেতে পেরেছেন বা বুঝতে চেয়েছেন? তিনি সুলতানের ব্যক্তিসত্তা নয়, সুলতানের তথ্যনির্ভর জীবন-বৃত্তান্তকেই মূলত আমলে নিয়েছেন শিল্পকর্ম বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে।
গ্রামীন জীবন © শিল্পকর্ম : এস এম সুলতান [ সূত্র: ciiand]
তাই ছফা ‘কাজলটানা কোনো রমনীর ব্রীড়াভঙ্গি’ সুলতানকে চঞ্চল করেছিল কিনা সেই অজানা রাজ্যের খবরটি, সমাজের প্রতিষ্ঠিত পুরুষালি মনোভঙ্গি থেকে পরিবেশন করেছেন; ভুলেও দ্বারস্থ হননি সেই প্রশ্নটির—সুলতান কেন নিজে শাড়ি পরে, বেণী করে থাকতে পছন্দ করতেন? দ্বারস্থ হলে কী সংকট হয় সে বিষয়ে পরে আসছি। তার আগে হাসনাত আবদুল হাই তাঁর সুলতান বইয়ে নানা প্রসঙ্গে সুলতানের জীবনের যে প্রামাণ্য তৈরি করেছেন, তার কয়েকটি চিত্র দেখে নেওয়া দরকার। সুলতানের ব্যক্তিসত্তার কয়েকটি ছবি—
...মাথার চুলে ফুল গুঁজে শাড়ি পরে গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে যেতেন।
...কলেজে ঊর্মিলা নাটক হবে। পরিচালনা করবে ফিফথ ইয়ারের ছাত্র রাজন তরফদার।...সুলতানকে বাছাই করা হলো ঊর্মিলার নাম ভূমিকায়।
...সুলতান রাতের ট্রেনে চেপে বসলো। সঙ্গে একটা ব্যাগ, ব্যাগের ভেতর কয়েকটা কাপড়, আয়না, চিরুনি।
এইভাবে বাংলাদেশের দৃশ্যপটে হাজির হওয়া সুলতানকে নিয়ে আধুনিক চার স্তম্ভের অনুগামী নাগরিকেরা ‘বিব্রত’ বোধ করতেন—
...শাড়ি পরে নূপুর পায়ে আর্টস কলেজে চলে যেতেন। আমিনুল বিব্রত বোধ করতেন।
তাহলে সুলতান যেখানে ফিরে গেলেন, সেইখানে, সেই নড়াইলে, সেই গ্রামীণ সমাজে সুলতান কীভাবে নন্দিত হতেন—
...শাড়ি পরে বেরুলে পাড়ার ছেলেরা পেছন থেকে তাড়া করতো। খ্যাপাত হিজড়ে, হিজড়ে বলে।
...পুরুষ মানুষ, শাড়ি পরছে, ছিট কাপড়ের ব্লাউজ। পায়ে আলতা, চুল বেণি করা, ঐসব দেখেই বলত।
হত্যাযজ্ঞ: এস এম সুলতান [ ছবির সূত্র: শিল্পকলা একাডেমির অ্যালবাম থেকে]
গ্রাম ও শহর, ‘ঐতিহ্য’ প্রবাহিত সমাজ ও আধুনিক রাষ্ট্র কোথাও কেউ সুলতানকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই। কিন্তু সুলতানের শিল্পকর্মের এমন এক বয়ান তৈরি হয়েছে, যা মহৎ এবং সর্বজনীন। তাহলে কি সুলতান নিজেই তাঁর অগ্রহণযোগ্যতাকে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে এসেছেন? এই রূপান্তরের মধ্যে সুলতানের ব্যক্তিসত্তার মৌলিক আকাঙ্ক্ষা বা বৈশিষ্ট্য কি কোনো আশ্রয় গ্রহণ করেনি প্রতীকীরূপে?
হাসনাত লিখছেন—
না। এখন আর পরেন (শাড়ি) না। ঠিক কবে, কেন ছেড়ে দিলেন কেউ জানে না। তিনি এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেন না।
এই না বলতে পারার, এই যে নিজেকে নিজরূপে প্রকাশ করতে না পারা, তার মধ্যে কি যাতনাবোধ নেই? এই যন্ত্রণার কি কোনো প্রকাশ নেই তাঁর শিল্পে? একজন পুরুষ হিসেবে মুর্তজা বশীর এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন—
বশির তেমনি দুষ্টমির স্বরে বললেন, আপনার ফিগারগুলো অমন পেশিবহুল, শক্তিশালী কেন? আপনি দুর্বল, রোগা, তাই কি সাবকনসাসে মোটা, স্বাস্থ্যবান হওয়ার ইচ্ছে থেকে অমন ফিগার আঁকেন?
‘বিব্রত’ বোধের অন্তরালে চাপা পড়ে যায় এর সত্যিকার স্বরূপ অন্বেষণের তাগিদ। বিকল্প খোঁজার প্রকরণও বাইনারি—
সুলতান ভাই এখন না হয় রুগ্ন হয়ে পড়েছেন। যৌবনে কিন্তু স্বাস্থ্যবান আর সুপুরুষ ছিলেন।
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মৌলিক ভাষ্য ছফার অনুগামী। সেই অনুগামী ভাষ্যের একটি পর্যায়ে জাহাঙ্গীর লিখছেন—সুলতান ‘প্রত্যাখ্যান করেছেন বঙ্গীয় নান্দনিকতার মধ্যে ক্রিয়াশীল রাধাকৃষ্ণের বোধ এবং ইউরোপ আনীত আর্কেডিয়ার বোধ।’
ঔপনিবেশবিরোধী ক্ষমতার বয়ান নির্মাণকারী সুলতানকে চিহ্নিত করার যে উদ্যোগ, সেই উদ্যোগে ‘বঙ্গীয় নান্দনিকতার মধ্যে ক্রিয়াশীল রাধাকৃষ্ণের বোধ’কে অস্বীকার করাতে হয় সুলতানকে দিয়ে। অথচ সুলতানের ব্যক্তিসত্তাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম বলছেন, ‘আসলে নিজেকেই রাধা ভাবতেন তখন সুলতান।’ হাসনাত যাকে উল্লেখ করছেন ‘ট্রান্সভেস্টিজম’ বলে।
জাহাঙ্গীরের নির্মিত সুলতানের মধ্যে উপনিবেশবিরোধিতা তীব্র, বিরোধিতা রয়েছে রাধাকৃষ্ণের নান্দনিক বোধের। এই পারস্পরিক স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি বোধের মধ্যেই বেড়ে উঠেছে, পরিচর্যা পেয়েছে সুলতানের ছবির ভাষ্য। রাধার নান্দনিক বোধবিহীন সুলতানই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পের ইতিহাসের পতিত্বশক্তি লাভ করেছে। অর্থাৎ ব্যক্তিসত্তাকে বাদ দিয়ে সুলতানের শিল্পকর্মের মানবিক আলোচনা অগ্রসর হয়েছে, বিমানবিক শিল্পরূপ আবিষ্কারের আঙ্গিকে। ছফার মতো জাহাঙ্গীরও দূরে সরিয়ে রেখেছেন সুলতানের ব্যক্তিসত্তাকে। অস্বস্তিবোধ করেছেন সুলতানের বহুমাত্রিক লৈঙ্গিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের পাঠ নিতে। এবং সমাজ-ঐতিহ্যের গ্রহণযোগ্য পাটাতনে বসে বলছেন—
সুলতানের ট্র্যাজেডি হচ্ছে যেভাবে বাঁচা যায় না, তিনি সেভাবে বাঁচতে চেয়েছেন।
সুলতানকে লৈঙ্গিক বাইনারি দৃষ্টিভঙ্গিতে আটকে রাখার মধ্যেই শিল্প-ইতিহাসের আরেকটি বাইনারি বোঝাপড়া তৈরি হয়। আর তা হলো—ঔপনিবেশিক ক্ষমতা ও শোষণের সমান্তরালে সুলতানের পেশিবহুল কৃষকসমাজে ‘ক্ষমতা’ ধারণাটিকে বোঝার প্রকরণটি। সুলতানের নিজস্ব শরীরী যে অবয়ব; যাকে ‘দুর্বল’, মেয়েলি মনে হয়েছে নানাজনের, যা থেকে উত্তরণের উপায় অনুসন্ধানে যদি পেশিবহুল শরীরে সুলতান আশ্রয় খোঁজেন, তবে তা একান্তই রেঁনেসা থেকে রেঁনেসা-পরবর্তী ঔপনিবেশিক শাসকের পুরুষালি ক্ষমতা ধারণার অনুগামী। ভারতীয় প্রাচীন শিল্পকলার ইতিহাসে যেসব ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বুদ্ধের ভাস্কর্য অন্যতম। এসব ভাস্কর্য ‘effeminate beauty’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। এই অঞ্চলের পুরুষদের মধ্যে ব্রিটিশ জেমস্ মিলের মতো প্রভাবশালী ইতিহাসবিদেরা দেখতে পেয়েছেন- ‘feminine softness’ এবং এই আখ্যার বিপরীতে উপনিবেশীয় বিদ্বজ্জনেরা নিজেদেরকে গড়ে তুলতে চেয়েছেন যথার্থ ‘male body’র অনুকরণে। সেদিক বিবেচনায় সুলতান যে প্রকারে ক্ষমতাকে প্রকাশ করেছেন, তা পেশিশক্তিরই প্রকাশ। ইউরোপীয় ক্ষমতা ও শরীরী পৌরুষ ধারণার বিপরীতে সুলতানের ক্ষমতা ধারণা সে ক্ষেত্রে কতটা উপনিবেশবিরোধী তথা ক্ষমতাবিরোধী? ক্ষমতাবিরোধী অনুরূপ ক্ষমতাকাঠামো কতটা মানবিক সমাজের পক্ষে? আর যাঁরা সুলতানের পেশির পক্ষে, উপনিবেশবিরোধী অবস্থান থেকে ওকালতি করেন, তাঁদের ঔপনিবেশিক ক্ষমতা ধারণাটিও প্রশ্ন সাপেক্ষ নয় কি? বাইনারি অবস্থানের বাইরে এসে সুলতানের ‘হিজড়ে’ বা ‘ট্রান্সভেস্টিজম’ সত্তাটিকে সামনে আনলে বা স্বীকার করে নিলে কী হয়?
তথ্যসূত্র
সুলতান: হাসনাত আবদুল হাই, ইউনির্ভাসিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, ২০১৮, পৃ-২২ [ নোট: শিরোনামে ‘হিজড়া’ শব্দটি নেয়া হয়েছে কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাইয়ের সুলতান উপন্যাস থেকে।]
লিঙ্গ পরিচয়ে আদমেরা বিব্রত হয় না, একজন শিল্পি বিব্রত হতে পারে না, মনুষ্যত্ব বোধ থাকলে সেও একজন শিল্পিকে লিঙ্গ পরিচয়ে চিহ্নিত করার চেষ্টা করবে না।
শ্যামল শিশির
মে ০৯, ২০২২ ১৫:০৯
ভালো লেগেছে।
মিরাজুল ইসলাম
নভেম্বর ০৬, ২০২১ ০০:১৫