প্যারিসের ক্লাসি ক্যাফে ও সাবমেরিনের বৃত্তান্ত

 

প্যারিসে আসা অব্দি ক্যাফে প্রোকপের বেহদ সুনাম শুনছি। আজ একটু উদ্‌যোগ করে চলে আসি এখানে। মেট্রোর ভূতল থেকে বেরিয়ে, মাত্র একটি ব্লক পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে তেরো নম্বর রু ডেল আনসিয়েনে কমিডিয়েতে আসতে কোনো অসুবিধা হয় না। বেলা এগারোটা বাজতে মিনিট দশেক বাকি আছে। আমার সুহৃদ, ডুবোজাহাজের মিসাইল ছোড়া সাবেক নাবিক ম্যানুয়েল সান্তিয়াগো এখনো এসে পৌঁছায়নি। তেমন তাড়া কিছু নেই। তাই ক্যাফেতে ঢোকার আগে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে শত বছরের পুরোনো দালানটিকে নিরিখ করে দেখি।

ইমারতের বয়স হয়েছে বটে, তবে প্লাস্টার অব প্যারিসের লেপাপোছায় নোনা ধরেনি কোথাও। দালানটির সর্বত্রছাদ থেকে দেয়াল, কার্নিশ ও জানালায় হরেক কিসিমের পুষ্প-পল্লব ও সবুজিম লতার সমারোহ। প্রবেশপথ পেরোতেই দেখি, সুপরিসর কামরার দেয়াল ঘেঁষে রাখা গ্র্যান্ড পিয়ানোর ডালার ওপর বসে আলগোছে হাই তুলছে তুলতুলে পশমের সিয়ামিজ বিলাই। আমি তার দিকে দিশা ধরে তাকাচ্ছি, সেও আমাকে অবলোকন করে আহ্লাদে আটখানা হয়ে মেয়াও মেয়াও আওয়াজে উঠে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ে।

পিয়ানোর পেছনের দেয়ালে আমি দেখতে পাই ক্যাফেটির প্রতিষ্ঠাতা ফ্রানসেসকো প্রোকপিওর পোর্ট্রেট। ইতালি থেকে প্যারিসে আসা এ অভিবাসী পুরুষ ক্যাফেটি প্রতিষ্ঠা করেন ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে। ইথিওপিয়া থেকে সরবরাহকৃত কফিবীজ ভেজে গুঁড়া করে, তা গরম জলে মিশিয়ে, তাতে এলাচির ফোড়ন দিয়ে পান করার রেওয়াজ যদিও তারও অনেক অনেক আগে প্রচলিত হয়েছে কায়রো, বাগদাদ কিংবা আলেপ্পোতে, ফরাসি মুলুকে কফির চল হয় ষোলো শতকের শেষ দিকে। আর সতেরো শতকে যখন ক্যাফে প্রোকোপে চালু হয়, তখন ফরাসি সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা, নাগরিকদের সহবত ও প্রণয় নিবেদনের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে কফি হাউসগুলো।

আমি মলিন এক মোমহীন ঝাড়ের তলায় দাঁড়িয়ে পিতলের ফলকে লেখা তথ্যের দিকে তাকাই। জানা যায় যে, ১৭২৩ সালে প্যারিস নগরীতে ক্যাফের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন শত তেইশটি। ঠিক বুঝতে পারি না এদের শুমারি করা হয়েছিল কেন? এসব দেখেশুনে ক্যাফে প্রোকপের বনেদিত্ব সম্পর্কে গর্মাগরম পানীয় পান করনেওয়ালাদের সন্দেহ করার কোনো অবকাশ থাকে না।

ফ্রককোট পরা ভায়োলিন হাতে বুড়ো এক সাহেব এসে আমাকে বাও করে ছড় টেনে সামান্য একটু বাজান। উইগ পরা মাথায় তার ঢেউ খেলানো এক রাশ কৃত্রিম চুল। তাতে রাবারের ব্যান্ড বেঁধে নেউলের লেজের মতো বুশি পনি টেইলটি আটকানো। বয়োবৃদ্ধ এ মানুষকে দেখায় রাজা চতুর্দশ লুই-এর খানসামার মতো। আমি যে পয়লাবার খানদানি ক্যাফে প্রোকোপেতে পা দিয়েছি, তা বুঝতে পেরে তার মোমঘষা মোচের তলায় ফুটে ওঠে প্রশ্রয়ের হাসি। তিনি হাই পাওয়ারের লেন্সের ভেতর দিয়ে আমার গতরে পরা বাটিকের ফতুয়ার কারুকাজ খুঁটিয়ে দেখেন। ঠিক বুঝতে পারি না বনেদি কেতার এ ক্যাফেতে কোনো ড্রেসকোড আছে কি না? তবে কি আমার উচিত ছিল ট্যাক্সিডো বা ত্রি-পিস স্যুট পরে আসার? আমাকে অধিক বিরক্ত না করে, ভেতরের বেশ বড়সড় হল-কক্ষে ঢুকে পড়ার ইশারা দিয়ে তিনি নিজেকে মঁশিয়ো বঁনোয়া বলে ইনট্রোডিউস করেন।

হল-কক্ষের দেয়ালে সারি দিয়ে ঝুলছে নানা ধরনের প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র ও ল্যান্ডস্কেপে নিসর্গের সাবুজিক রূপ। একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে, করিডোরের দেয়ালে ঝোলানো বিখ্যাত সব কবি ও সাহিত্যিকের চিত্র। ১৯৩৮ সালে আঁকা একটি ছবি থেকে যশস্বী কবি পল ভেরলেইন নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে। মঁশিয়ো বঁনোয়া আমাকে এসবের দিকে দিশা ধরে তাকানোর তেমন কোনো সুযোগ দেন না। তিনি বরং ক্যাফে প্রোকপে সম্পর্কে টুকটাক কথাবার্তা বলেন। এক জামানায় এখানে হামেশা হাজিরা দিতেন ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার কিংবা রুশো। এই কামরার কোনো না কোনো টেবিলে বসে আড্ডাবাজিতে মাততেন সাহিত্যিক ভিক্টোর হুগো অথবা বালজাক। তাঁর তথ্য প্রদানে আমি তেমন একটা ইমপ্রেসড্ হচ্ছি না, তাই তিনি তুরুপের তাস ছোড়ার ভঙ্গিতে বলেন, খোদ নেপোলিয়নও একসময় এ ক্যাফেতে আসতেন। সম্রাটের সম্ভ্রান্ত চাকরিটি তখনো জোটেনি তাঁর। রীতিমতো বেহদ্দ বেকার। হামেশা বাকিতে পান করতেন এক পেয়ালা ইথিওপিয়ান কফি। দেনা বেড়ে গেলে একপর্যায়ে তিনি তাঁর বিখ্যাত হ্যাটটি বন্ধক দিতে বাধ্য হন। আমি অবশ্য পকেটে প্রচুর ইউরো ও খান দুয়েক ক্রেডিট কার্ড নিয়ে এখানে এসেছি। কফি পানের বিনিময়ে আমাকে ফতুয়া বন্ধক দেওয়ার ঝামেলা ঘাঁটাতে হবে না। কোণের দিকের একটি নির্জন কামরায় এসে চেয়ার টেনে বসলেও মঁশিয়ো বঁনোয়াকে সহজে কাটানো যায় না। তিনি আমার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে, ভায়োলিনটি আরেক দফা বাজিয়ে কুর্নিশি কায়দায় ঝুঁকে বাও করে তবে আমাকে রেহাই দেন।

হল-কক্ষের দেয়ালে সারি দিয়ে ঝুলছে নানা ধরনের প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র ও ল্যান্ডস্কেপে নিসর্গের সাবুজিক রূপ। একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে, করিডোরের দেয়ালে ঝোলানো বিখ্যাত সব কবি ও সাহিত্যিকের চিত্র। ১৯৩৮ সালে আঁকা একটি ছবি থেকে যশস্বী কবি পল ভেরলেইন নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে।

ক্যাফে প্রোকপ। ছবি © মঈনুস সুলতান

নজর পড়ে, দেয়ালে ঝোলানো সাদামাটা ফ্রেমের একটি চিত্রে। শোলার হ্যাট পরা সাহেবজ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে বিমর্ষভাবে তাকিয়ে আছেন। পাশে নীলাভ রঙের গাউন পরা বিবি, তার মুখে কোনো কিছুতে মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার অভিব্যক্তি। টেবিলে জোড়া পানপাত্রে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের ওয়াইন ও আইস বাকেট। চিত্রে সাহেব-বিবির ব্যক্তিগত মুহূর্ত সংবেদনের ছোঁয়ায় এমনভাবে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে যে চোখ ফেরানো মুশকিল হয়। জিন বেরুড [১৮৪৯-১৯৩৫] নামে প্যারিস নগরীর এক ফরাসি চিত্রকরের আঁকা অরিজিনাল এ কাজ শনাক্ত করতে পেরে আত্মতৃপ্তিতে ভরে ওঠে মন। জিন বেরুড প্যারিজিয়ান লাইফ তথা মোঁমাতে ঘুরপাক করা সমঝদার গোছের মানুষজন, ক্যাফেতে বসা যুগল বা সেইন নদীর তীরজুড়ে বিস্তারিত চলমান জীবনের দৃশ্যপট আঁকতে ভালোবাসতেন। চিত্রের এ যুগলকে তিনি এঁকেছেন বেশ কয়েকবার নানা ভঙ্গিতে। এ চিত্রগুলোর প্রেক্ষাপট সর্বদা প্যারিসের কোনো না কোনো ক্যাফে। তবে প্রতিটি চিত্রে আছে ডিটেলের সামান্য হেরফের এবং নারী-পুরুষের মুখে খানিকটা ভিন্ন রকমের অভিব্যক্তি। জানতে বাসনা হয়, বাস্তব জীবনে এ যুগলের সঙ্গে চিত্রকরের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটা গাঢ় ছিল?

নির্জন হল-কক্ষের শিল্পশোভন পরিবেশে আমি মেনুর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দুনিয়ার নানা দেশ থেকে আমদানি করা কফির ছবি ও উৎপাদনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে দেওয়া তথ্যগুলো খুঁটিয়ে দেখি। দেয়ালের ওপাশ থেকে ভেসে আসে চেনা গানের কলি, আ..ইল বি দেয়ার ফর ইউ…’। গানটি গেল শতকের নয়ের দশকে রেকর্ড করে আমেরিকার পপ রক ডুয়ো রেমব্রেন্ডস্। লেমনট্রি নামে হালফিল ক্ল্যাসিকস্-এর মর্যাদাপ্রাপ্ত লোকপ্রিয় লিরিকটি গীত হচ্ছে আমার সুহৃদ ম্যানুয়েল সান্তিয়াগোর গলায়। কিন্তু তাকে হল-কক্ষের কোথাও দেখতে পাই না।

সাবমেরিনের সাবেক সাঙ্গাত ম্যানুয়েলের সঙ্গে আমার জান-পহচান দোস্তি প্রগাঢ় হচ্ছে দিন দিন। কোনো কারণে প্রফুল্ল হলে, কিংবা তার জুটে গেলে যথোপযুক্ত নারী ক্লায়েন্ট, সে রোমান্টিক গোছের লিরিক গুনগুনিয়ে গেয়ে ড্যান্স করতে ভালোবাসে। না, আমাকে বিশেষ একটা খোঁজাখুঁজি করতে হয় না। ম্যানুয়েল কাঠখোদাইয়ে করা প্রমাণ সাইজের মনুষ্যমূর্তির আড়াল থেকে আততায়ীর মতো বেরিয়ে এসে হালকা চালে নৃত্য করে। কামরায় কফি পান করনেওয়ালা অন্য কোনো খদ্দের নেই, তাই তার গুনগুনানিতে সুর খেলে চমৎকার। সে সাবলীলভাবে গেয়ে যায়, দিজ ফাইভ ওয়ার্ডস্ আই সোয়ার টু ইউ/হোয়েন ইউ ব্রিদ আই ওয়ান টু বি দ্য এয়ার ফর ইউ।

উটের লোমে তৈরি ভেস্ট পরেছে, তাই ম্যানুয়েলকে একটু এক্সোটিক দেখায়। আজকেএক গ্রিক নারী-ক্লায়েন্টের সঙ্গে অভিসারের বিষয়টি ভেবে সে মরোক্কান এ ভেস্ট আমার কাছ থেকে ধার নিয়েছে। প্যারিসের চিত্রকলাপ্রিয় নারী আডেলিনার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হচ্ছে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত করে সে বলে, গুড স্টার্ট ম্যান, দিস ইজ দ্য রাইট ওয়ে টু গো, একটু অ্যাডভেঞ্চারাস হও, মোঁমাতের বাসস্থান নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, হ্যাভ ওয়ান অব দি উওম্যান পে ফর ইয়োর হোটেল অ্যান্ড অল দ্যাট। আমি তার উপদেশে বিশেষ একটা মনোযোগ না দিয়ে কফির অর্ডার করি। ম্যানুয়েল একটু যেন অধৈর্য হয়ে জানতে চায়, উড ইউ লাইক টু হিয়ার মাই প্ল্যান উইথ মাই নিউ গ্রিক কনকোয়েস্ট? উজানে ভেসে এসেছে যে মাছ, তাকে কীভাবে খেলিয়ে বড়শিতে ধরতে চাচ্ছি তা শুনতে চাও না...মাই ডিয়ার বাডি? খানিক চিন্তাভাবনা করে জবাব দিই, কফিটা প্রথমে একটু চাখি, তারপর এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বাতচিত করা যাবে। তবে তারও আগে আরেকটা বিষয়ে একটু খোঁজখবর নিতে চাই। তুমি তো সাবমেরিনে মিসাইল ছোড়া গানার হিসেবে কাজ করতে ম্যানুয়েল। আই অ্যাম ডিপলি ইন্টারেস্টেড টু নো হাউ ওয়াজ ইট লাইক টু লিভ ইন আ সাবমেরিন।

উৎসাহিত হয়ে ম্যানুয়েল জানতে চায়, টেল মি হোয়াট ডু ইউ অলরেডি নো আবাউট সাবমেরিন লাইফ। আমি জবাব দিই, জলতলে ডুবোজাহাজের জীবন বলতে আমি হান্ট ফর রেড অক্টোবর সিনেমায় সামান্য একটু দেখেছি, আর অনেক বছর আগে ক্রিমসন টাইড বলে একটি ফিল্ম দেখেছিলাম, তারও কিছু দৃশ্যপট মনে দাগ কেটেছিল... দ্যাটস্ ইট। আমার বিষয়টা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য রকম, আমার এক রিটায়ার্ড আঙ্কেল পি-ত্রি নামে সাব-হান্টার জাতীয় সাবমেরিনের ক্রু হিসেবে কাজ করতেন। তো আমি স্ট্রিটে ক্র্যাক কোকেন বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তার অ্যাপার্টমেন্টে শেল্টার নিয়েছিলাম। উনি নেভির রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির সঙ্গে আমার যোগাযোগ করিয়ে দেন। তারা আমাকে স্টাইপেন্ড দিয়ে প্রথমে একটি কমিউনিটি কলেজে কোর্স করতে পাঠায়। তারপর নিউক স্কুলে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়। দেন অফ ইউ গো। একটি ডুবোজাহাজের খোলে পুরে তারা আমাকে ভাসিয়ে দেয় জলতলে।

এ পর্যন্ত বলে ম্যানুয়েল বিরতি নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে তার গ্লাডস্টোন ব্যাগ খুলতে যায়, কিন্তু আমি তাকে গল্পের খেই ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করি, জলতলে তোমার প্রথম দিকে সপ্তাহ কয়েক কেমন কেটেছিল, ম্যানুয়েল? মাথা ঝাঁকিয়ে সে জবাব দেয়, গানারের চাকরিতে অ্যাডজাস্ট করতে খুব কষ্ট হয়েছে প্রথম দিকে। মাঝে মাঝে আমাকে জেগে থাকতে হতো ৩৬ ঘণ্টার মতো। যখন পেরিস্কোপের পাশে ওয়াচ ডিউটি থাকত, ছয় ঘণ্টা একনাগাড়ে চোখের পলক না ফেলে সার্ভিলেন্স স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। বাথরুমে পর্যন্ত যেতে পারতাম না। ডিউটি থেকে একটু বিরতি হলে আমার কেবলই খিদা পেত। কিন্তু ডাইয়িং রুমে এসে কিছু মুখে তুলতে পারতাম না। জাস্ট ইমাজিন ম্যান। ফার্স্ট অ্যাটাক সাবমেরিনের আলোহীন বাতাবরণে বাস করছি একনাগাড়ে পঞ্চাশ থেকে ষাট দিন। অক্সিজেন লেভেল নামিয়ে রাখা হয়েছে, তাই হামেশা কেমন যেন ঘোরের মাঝে আছি, তারপর খাবার বলতে ফ্রোজেন ভেজিটেবলস্ আর পাউডারড্ এগস্। হোয়াট আ লাইফ?

দু-পেয়ালা কড়া ধাঁচের কাপাচিনোর সঙ্গে পরিবেশিত হয় মুচমুচে দুটি কোঁয়াসো। ম্যানুয়েল খুব আগ্রহ নিয়ে কোঁয়াসো কেটে তাতে ক্যামোন বেয়ার চিজের ছোট্ট চাকলা কাঁটাচামচ দিয়ে গেঁথে মুখে তোলে। আমি কোস্টারিকান কফির সুরভিতে উদ্দীপ্ত হয়ে তাতে দুধের সর দিয়ে আঁকা পাতার নকশাটি দেখি। পেয়ালার পাশে পড়ে আছে ছোট্ট একটি কাগজ। তাতে দেওয়া আছে কোস্টারিকার যে-পাহাড়ি গ্রামে উৎপন্ন হয়েছে কফি বিন, ওখানকার চাষিদের দিনযাপনের একটি চিত্র; এবং এ পণ্য যে ফেয়ার প্রাইস বা ন্যায্যমূল্যে কেনা হয়েছে, সে সম্পর্কেও ইলাবরেট তথ্য।

মঁশিয়ো বঁনোয়া আমাকে এসবের দিকে দিশা ধরে তাকানোর তেমন কোনো সুযোগ দেন না। তিনি বরং ক্যাফে প্রোকপে সম্পর্কে টুকটাক কথাবার্তা বলেন। এক জামানায় এখানে হামেশা হাজিরা দিতেন ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার কিংবা রুশো। এই কামরার কোনো না কোনো টেবিলে বসে আড্ডাবাজিতে মাততেন সাহিত্যিক ভিক্টোর হুগো অথবা বালজাক। তাঁর তথ্য প্রদানে আমি তেমন একটা ইমপ্রেসড্ হচ্ছি না, তাই তিনি তুরুপের তাস ছোড়ার ভঙ্গিতে বলেন, খোদ নেপোলিয়নও একসময় এ ক্যাফেতে আসতেন।

ভলতেয়ারের পোর্ট্রেট। ছবি © মঈনুস সুলতান

পেয়ালায় নিঃশব্দে চুমুক দিয়ে ম্যানুয়েল উদ্‌গ্রীব হয়ে জানতে চায়, তুমি কি সাবমেরিনের জীবনযাপন সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চাও? জবাবে আমি বলি, ওহ্, ইয়েস ম্যানুয়েল, সাবমেরিনের সোশ্যাল লাইফ কী রকম ছিল, আই অ্যাম ইন্টারেস্টেড টু লার্ন আবাউট দিস। কী যেন চিন্তা করে সে বলে, দেয়ার ওয়াজ নো সোশ্যাল লাইফ অ্যাট অল, নো গার্লস্, নো পার্টি, নো ড্যান্সিং বাট প্লান্টি অব সেক্স, উই হ্যাভ সেক্স অল অ্যারাউন্ড আস। আমি এবার কৌতূহলী হয়ে জানতে চাই, তুমি কি সমকামিতার কথা বলছ ম্যানুয়েল? সে জবাব দেয়, নট রিয়েলি, সমকামিতা যে অল্প-বিস্তর ছিল না তা নয়, ইট ওয়াজ ভেরি লিটল অ্যান্ড ইনসিগনিফিকেন্ট, ইমাজিন আওয়ার লাইভস্ ট্রেপড্ ইন আ লং মেটেল টিউব। বেশির ভাগ সময় আমরা ভাসছি পেরিস্কোপ ডেপ্‌থে। সাবমেরিনের সর্বত্র ছড়ানো ভারী সব নিউক্লিয়ার অস্ত্রশস্ত্র। সামান্য যে স্পেস অবশিষ্ট আছে, তাতে শোবার জন্য বাংক-বেড পাতা। আমরা বিছানাগুলো শেয়ার করছি। ছয় ঘণ্টা ঘুমানোর পর অটোমেটিক অ্যালার্ম জাগিয়ে দিচ্ছে আমাদের। তারপর বিছানার চাদর আর বালিশের ওয়াড় বদলিয়ে তাতে ঘুমাচ্ছে অন্য এক গানম্যান বা মিসাইল ছোড়া নাবিক।

ম্যানুয়েলকে অস্থির ও খানিক উত্তেজিত দেখায়। সে গ্লাডস্টোন ব্যাগটি খুলতে গেলে আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি, ম্যানুয়েল, ব্যাগে করে যেসব হাতিয়ারপত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ, তা দেখার কিউরিওসিটি আমার আছে, অ্যান্ড আই প্রমিজ, এগুলো আমি মনোযোগ দিয়ে দেখব। বাট বিফোর দ্যাট, প্লিজ ডু মি আ ফেভার। সাবমেরিনে সেক্স লাইফের বিষয়টা আরেকটু খুলে বলো। তুমি কি স্বমেহনের রেফারেন্স দিচ্ছ? সে যেন কোনো বিষয়ে ঘোরতর চিন্তায় পড়ে গিয়ে জবাব দিচ্ছে, এভাবে কপাল কুঁচকে বলে, স্বমেহনের এলিমেন্ট খানিকটা ছিল বটে, বাট দ্যাট ওয়াজ নট অল। তিরিশ-চল্লিশ দিন ধরে একনাগাড়ে ভাসছি জলতলে। লাইফ ওয়াজ টোটালি মনোটোনাস, দেয়ার ওয়াজ নাথিং টু লুক অ্যাট, ওয়ার্ক ওয়াজ সো ডিমান্ডিং, স্লিপ ওয়াজ সো শর্ট সাপ্লাই। আমি বই পড়তে চেষ্টা করছি, মিউজিক শুনতে চেষ্টা করছি, আই ওয়াচড্ অল দি পর্নোগ্রাফিক ডিভিডিজ্ আই ওয়াজ কেরিং উইথ মি। বাট্, দেন হোয়াট?

ম্যানুয়েল কথা বলা থামিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে জিন বেরুডের চিত্রের দিকে তাকায়। আমি প্রশ্ন করি, ম্যানুয়েল, ডু ইউ নিড আ হার্ড ড্রিংক? নো, নট রিয়েলি, বলে সে মাথা ঝাঁকায়, সাবমেরিনের বিষয়টা আমি এই প্রথম কাউকে বলতে যাচ্ছি, আমার নারী ক্লায়েন্টরা আমার শরীর সম্পর্কে আগ্রহী, দে আর নট অ্যাট অল ইন্টারেস্টেড ইন মাই লাইফ ইন আ সাবমেরিন। সো, ইউ...মাই ডিয়ার বাডি, ইউ লিসেন কেয়ারফুলি, আই অ্যাম টেলিং ইউ দ্য ট্রুথ। আমার সেক্স লাইফ ছিল স্বমেহন ও পুতুল-মানবীকে সম্ভোগের কম্বিনেশন। ইতালির এক বন্দর থেকে আমি ক্রয় করি খুব সংবেদনশীল সোনালি চুলের এক পুতুল-মানবী। স্পর্শে সে উদ্দীপ্ত হতো, উষ্ণ হয়ে উঠত তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। প্রতিক্রিয়ায় আমি বলি, ম্যানুয়েল, একটি কথা, তোমার এ আচরণ সম্পর্কে কখনো কোনো সাইক্রিয়াট্রিস্টের সঙ্গে আলোচনা করেছ? সে রেগে গিয়ে বলে, লুক বাডি, ইয়োর কমেন্ট ইজ ইনসালটিং, আমি তোমাকে বিশ্বাস করে ব্যক্তিগত বিষয়টা বলছি। বিলিভ মি, আমার হৃদয়ে এখনো এ পুতুল-মানবীর জন্য সফট কর্নার আছে। মেয়েটি এতই আডোরেবল ছিল...হাউ ডু আই এক্সপ্লেন টু ইউ বাডি, আডোরা বলে যখন ডাকতাম তার নীল চোখে যেন সাড়া জাগত। তাকে আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম কয়েকটি টোমাহক মিসাইলের আড়ালে। বছর দেড়েক আডোরার সঙ্গেই ছিল আমার সংসার।...অ্যান্ড আই লাভড্ হার সো মাচ।

প্রতিক্রিয়ায় আমি কিছু বলতে গিয়ে তার ঠাণ্ডা দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেমে যাই। তার চাহনিতে এমন কিছু আছে যে, মনে হয় মুহূর্তে সে হয়ে উঠতে পারে নির্মম এক আততায়ী। আমার অন্তস্তলে তীব্র ভীতি ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ম্যানেজ করার জন্য বলি, ম্যানুয়েল, ইউ আর ফিলিং টেরিবেলি অ্যারি উইথ মাই কমেন্ট, আই আন্ডারস্ট্যান্ড দিস। সে হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে ভেস্টের পকেট থেকে ফ্লাক্স বের করে পান করে খানিকটা নিট রাম। হাতের তেলো দিয়ে ঠোঁট-মুখ খুব রাফ ভাবে মুছে সে বলে, জাস্ট আন্ডারস্ট্যান্ড ওয়ান প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল ট্রুথ, আমার শারীরিক চাহিদা ছিল, এ ধরনের চাহিদা থাকাটা অ্যাবনরমাল কিছু না, আর পুতুল-মানবীর সঙ্গে আমার দৈহিক মিথস্ক্রিয়ায় কোনো ক্রাইম ছিল না। আমি কাউকে ধর্ষণ করিনি।

তার কথা শুনে আমি নিশ্চুপ থাকলে, শিশুরা যে-রকম রেগে গেলে খেলনা ভেঙে ফেলে, এ রকম ভঙ্গিতে কাঁপতে কাঁপতে সে বলে, লিসেন অ্যাগেইন বাডি, লিসেন কেয়ারফুলি, আই ডিড নট ফাক আ গার্ল উইথআউট হার কনসেন্ট। আডোরা ওয়াজ আ মেয়ার ডল। আমি এবার তার হাত স্পর্শ করে বলি, ম্যান, আই উড লাইক টু সে আই অ্যাম টেরিবেলি সরি ফর দি কমেন্ট আই মেইড। কাইন্ডলি শান্ত হও, আমি ড্রিংকস নিয়ে আসছি, উই মাস্ট বি ফ্রেন্ডস্ অ্যাগেইন, সান্তিয়াগো।

বারের দিকে হেঁটে যেতে যেতে দেখি, মঁশিয়ো বঁনোয়া ভিন্ন একটি কামরায় কফি পানরত এক কাপলের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভায়োলিনে ছড়াচ্ছেন রীতিমতো ধ্রুপদি সেরেনাদ। দুপাত্র মার্টিনি নিয়ে ফিরলে ম্যানুয়েল কোনো আপত্তি না করে তা মুখে তোলে। আমি স্বস্তিবোধ করি। তবে তাকে একটু চিন্তিত দেখায়। সে গ্লাসে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু রুপালি জল কপালে ঘষে সিরিয়াসলি বলে, যেসব নারী আমার কাছে আসে, আগ্রহ নিয়ে ক্রয় করে আমার ম্যাসকুলিন সার্ভিস, দে আর ভেরি লোনলি, হাংরি ফর ফিজিক্যাল প্লেজার। মাই বডি ইজ মাই কমোডিটি, এই পণ্য আমার নিজস্ব, এটা আমি নারী ক্লায়েন্টদের কাছে বিক্রি করি, এন্ড আই ফিল ও-কে আবাউট ইট, কোনো নীতি-আদর্শের সমস্যা আমার নেই। আমি এবার প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলি, ম্যানুয়েল, টক আ বিট অ্যাবাউট ইয়োর নিউ কনকোয়েস্ট। আজ যার সঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছ, টেল মি অ্যাবাউট হার।

ম্যানুয়েল কথা বলা থামিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে জিন বেরুডের চিত্রের দিকে তাকায়। আমি প্রশ্ন করি, ম্যানুয়েল, ডু ইউ নিড আ হার্ড ড্রিংক? নো, নট রিয়েলি, বলে সে মাথা ঝাঁকায়, সাবমেরিনের বিষয়টা আমি এই প্রথম কাউকে বলতে যাচ্ছি, আমার নারী ক্লায়েন্টরা আমার শরীর সম্পর্কে আগ্রহী, দে আর নট অ্যাট অল ইন্টারেস্টেড ইন মাই লাইফ ইন আ সাবমেরিন। সো, ইউ...মাই ডিয়ার বাডি, ইউ লিসেন কেয়ারফুলি, আই অ্যাম টেলিং ইউ দ্য ট্রুথ। আমার সেক্স লাইফ ছিল স্বমেহন ও পুতুল-মানবীকে সম্ভোগের কম্বিনেশন। ইতালির এক বন্দর থেকে আমি ক্রয় করি খুব সংবেদনশীল সোনালি চুলের এক পুতুল-মানবী। স্পর্শে সে উদ্দীপ্ত হতো, উষ্ণ হয়ে উঠত তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

ক্যাফেতে যুগলের শিল্পকর্ম । ছবি © মঈনুস সুলতান

মৃদু হেসে সে জবাব দেয়, হার নেম ইজ আগাথা জিওরজিরাদিস। গ্রিসের নারী আগাথা ফেঞ্চ রিভেরাতে বেড়াতে এসেছে তার স্বামীর সঙ্গে ছোট্ট একটি ইয়াটে চড়ে। মন্টিকার্লোর কাছাকাছি এক সৈকতে ইয়াটের ইঞ্জিন বিকল হয়েছে। পুরোপুরি সারাই করতে লাগবে তিন চার দিন। তার হাজবেন্ড মি. জিওরজিরাদিস বোট মেকিনিক নিয়ে মেরামতির কাজ তদারক করছেন। এ সুযোগে আগাথা প্যারিসে দিন দু-তিনেক ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগাথাকে নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা তোমার আছে কি ম্যানুয়েল? গ্লাডস্টোন ব্যাগ খুলতে খুলতে সে ভাইভা পরীক্ষায় উত্তর জানা প্রশ্নের মতো সাবলীলভাবে জবাব দেয়, দিস ইজ হোয়াট আই ওয়াজ ট্রায়িং টু টেল ইউ ম্যান। তুমি তো তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছ না। সে ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা টেনে বের করলে আমি মন্তব্য করি, নাউ আই অ্যাম টোটালি কিউরিয়াস। সে যেন ক্লাসে সায়েন্সের কোনো প্রজেক্ট ডেমো করছে এভাবে জিনিসটি তুলে ধরে। ফোমের প্যাড লাগানো মিনিয়েচার দুটি চিমটার সঙ্গে তার জুড়ে দিয়ে তা আটকানো ছোট্ট একটি পেনসিল ব্যাটারির কৌটার সঙ্গে। দিস ইজ আ ভেরি সফিসটিকেটেড পিন্চার, ব্যবহৃত হয় স্তনবৃন্তে। খুবই নিরাপদ সেক্স-টয়। সামান্য একটু বিদ্যুৎ নেওয়া বা না নেওয়া নির্ভর করবে যে রিসিভ করবে তার মর্জি মোতাবেক, বলে সে আত্মতৃপ্তির হাসি হেসে আমার দিকে তাকায়।

আমি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নীরব থাকলে সে পিন্চারটি ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলে, হাউ আর ইউ ডুয়িং উইথ আডেলিনা। তোমরা একত্রে ইন্টারেস্টিং কিছু করছ? জবাবে আমি বলি, উই মেট আ কাপল অব টাইমস্। গতকালও তো ইমপ্রেশনিজম নিয়ে দারুণ কথাবার্তা হলো তার সঙ্গে। বাক্যের মাঝখানে আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে ঝাঁজিয়ে ওঠে, ম্যান, ইউ আর সো স্টুপিডলি ডিসঅ্যাপোয়েন্টিং, লিসেন বাডি, চিত্র নিয়ে আলোচনা করে খামোকা সময় নষ্ট কোরো না, এক্সপ্লোর করো তার শরীর। ব্যবহার করো টয়, আই অ্যাম টেলিং ইউ শি ইজ গোয়িং টু লাভ ইউ ফর দিস।

মঁশিয়ো বঁনোয়া ভায়োলিন হাতে হল কামরায় এসে বাজাতে শুরু করেন। খেয়াল করে দেখি, কামরাটি এখন আগের মতো নির্জন নয়। দু-তিনটি টেবিলে কফির পেয়ালা হাতে গুছিয়ে বসেছে আরও জনাকয়েক ধোপদুরস্ত খদ্দের। মঁশিয়ো ফরাসি ঘরানার কোনো সিগ্ধ সোনাটা বাজাচ্ছেন। তার বাদনে চাঁদের আলোয় ভাটির দিকে ভেসে যাওয়া খরস্রোতা নদীজলের ইমেজ মনে আসে। ম্যানুয়েলকে অস্থির দেখায়, তো আমি মৃদুস্বরে বলি, বাডি আর ইউ গোনা ইনট্রোডিউস মি টু আগাথা? গ্রিক নারীকে চাক্ষুষ দেখার একটু বাসনা হচ্ছে যে। ম্যানুয়েল মাথা ঝাঁকিয়ে এ প্রস্তাবে সায় দিয়ে বলে, ইয়েস, বাট বিফোর দ্যাট, আই উড লাইক টু সে আ বিগ থ্যাংক ইউ ফর গিভিং মি দিস লাভলি গ্রিন স্টোন।

সে গ্লাডস্টোন ব্যাগ থেকে গ্লাস বাবোলে মোড়া মোলডাভাইট পাথরের চাকলাটি বের করে মাথা হেলিয়ে বলে, ম্যান, আই অ্যাম সো গ্রেটফুল ফর দিস। আমাকে সবুজ পাথর সম্পর্কে কাইন্ডলি আরেকটু তথ্য দাও বাডি। ইট ইজ গোয়িং টু মেক মাই টাইম উইথ আগাথা সো মাচ ফান অ্যান্ড এক্সাইটিং। যেহেতু মোলডাভাইট পাথরের টুকরাটি আমি তাকে গেল রাতে দু-তিন দিনের জন্য ধার দিয়েছি, এবার এ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড দিতে আমার কোনো আপত্তি থাকে না। তো সবুজ পাথরের মসৃণ সারফেসে হাত বোলাতে বোলাতে বলি, মিস্টিরিয়াস এ সবুজ পাথরকে সম্মোহনের পুঁথি পুস্তকে এঞ্জেল স্টোন বলা হয়। এর জাদুময় আভার জন্য জিপসিরা একে ইনার ভিশন ক্রিস্টালও বলে থাকে। চেক রিপাবলিকের ভলতাবা নদীর কাছাকাছি একটি খনিতে এ ধরনের পাথর পাওয়া যায়। ম্যানুয়েল অধৈর্য হয়ে বলে, জাস্ট টেল মি অ্যাবাউট দ্য এফেক্ট অব দিস স্টোন। আমি জবাব দিই, আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এর মসৃণ সারফেস বুকের ঠিক হার্টের কাছাকাছি বা কপালে রাখলে প্রশমিত হয় অস্থিরতা। আর একাগ্রতা নিয়ে চোখের পলক না ফেলে সবুজ আভার দিকে তাকিয়ে থাকলে তাতে ভেসে ওঠে অনুপম দৃশ্যপট, এতে ঋদ্ধ হয় ইমাজিনেশন। মোলডাভাইট ব্যবহৃত হয় ব্যাপকভাবে সম্মোহনের হাতিয়ার হিসাবে। এর এফেকটিভনেস সম্পর্কে প্রচুর শুনেছি, তবে গ্যারান্টি দিতে পারব না। গ্যারান্টি আমি চাই না বাডি, আই ক্যান্ট ওয়েট টু ট্রাই ইট অন টু আগাথা। লেটস্ গো।

আজ অনেকক্ষণ বসা হলো প্রোকপে ক্যাফেতে। এবার উঠে পড়তে হয়। তো আমি বিল মিটিয়ে, বাদনরত মঁশিয়ো বঁনোয়ার হ্যাটে কিছু খুচরা ইউরো ফেলে তাকে মাথা ঝুঁকিয়ে বাও করে বেরিয়ে আসি বুলভারে।