• ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্রীদের মধ্যে অন্যতম আব্দুল হামিদ রায়হান। পাশাপাশি স্টুডিও আলোকচিত্রে তাঁর কৃতিত্ব বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত। তাঁর জন্ম ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, কুষ্টিয়ার জগতি ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামে। পৈতৃক ভিটেবাড়ি গড়াই নদীর ওপারে শালদা গ্রামে। বাবা চয়েন উদ্দিন মা জোবেদা খাতুন। পড়ালেখার হাতেখড়ি আড়ুয়াপাড়ায় এক মক্তবে [বর্তমানে ২নং পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়]। তিনি কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুলে নবম শ্রেণি নাগাদ পড়ালেখা করেন। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা পারিবারিক দায়িত্ব নেওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি ঘটে। ১৯৪২ সালে হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর কুষ্টিয়া আগমন উপলক্ষে প্রথম রাজনৈতিক মিছিলে অংশগ্রহণ করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে। ১৯৪৬ সালে যষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন মায়ের কাছে বায়না ধরে প্রথম ক্যামেরা কেনেন। আলোকচিত্রের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে বাংলাদেশের অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি স্থায়ীভাবে ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেন। ১৯৭৩ সালের ১৩ মার্চ তিনি কুষ্টিয়ায় গড়ে তোলেন রূপান্তর ফটো স্টুডিও তাঁর গড়ে তোলা রূপান্তর ফটো স্টুডিও বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় প্রায় তিন দশক ধরে আলোকচিত্রের প্রধান কেন্দ্র হয়েছিল। বৃহত্তর পরিসরে তাঁর আলোকচিত্র প্রথম নজরে আসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠালগ্নেই সেখানে তাঁর দুই শতাধিক আলোকচিত্র সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা, যশোর, ময়মনসিংহ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে তাঁর আলোকচিত্র সংগ্রহে আছে। কিন্তু জনপরিসরে ঢাকায় প্রথম তাঁর আলোকচিত্রের প্রদর্শনী হয় ২০০৭ সালে আমার দেখা ৭১ শিরোনামে দৃক গ্যালারিতে। দৃক পিকচার লাইব্রেরির কর্ণধার শহিদুল আলম আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি এজেন্সি অটোগ্রাফ এবিপি কর্ণধার মার্ক শেলির কিউরেটিংয়ে লন্ডনে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাঁর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আলোকচিত্র স্থান পায়। ২০০৯ সালে আয়োজিত ছবিমেলা-০২ পর্বে বাংলাদেশ ৭১ প্রদর্শনীতেও তাঁর আলোকচিত্র বিশেষ গুরুত্বসহকারে প্রদর্শন করা হয়। ২০১২ সালে ঢাকায় আর্ট সেন্টারে তাঁর দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাগ্রন্থে তাঁর আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। ২০১৪ সালে আলোকচিত্রের প্রতিষ্ঠান কাউন্টার ফটো তাঁকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে। ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ তাঁকে ভাষাসংগ্রামের জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে।