সুফিশিল্পী রনি আহম্মেদ
সুফিশিল্পী ও কবি রনি আহম্মেদ। বাংলাদেশের চিত্রকলায় নব্বই দশকের প্রভাব বিস্তারকারী শিল্পী। জন্ম ১৯৭১ সালে, ঢাকায়। তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশে সুফিবাদ চিত্রকলা চর্চার শুরু। চিন্তা, সাধনা ও ভক্তিবাদী দর্শন পাওয়া যায় তাঁর কাজে। তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউট [বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ] থেকে চারুকলায় স্নাতক ২০০২ সালে। স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে এক বছর ক্লাস করেছিলেন। সে যাত্রা বন্ধ করে ছবি আঁকায় মনোযোগী হন তিনি।
চারুকলার হাতেখড়ি ছোটবেলায়। বিদ্যায়তনে ভর্তি হওয়ার আগেই তাঁর কাজে একটা নিজস্ব ভাষা তৈরি করে নিয়েছিলেন। চারুকলায় ভর্তি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা শিখেছেন। তবে সেটা তাঁর কাজে খুবে বেশি যুক্ত করেননি। শুরুতে তিনি নানা রকম বুদ্ধিবৃত্তিক ও পোস্টমডার্ন ছবি আঁকা শুরু করেন। উল্লেখ্য তিনি অ্যাবসার্ডিটি, সায়েন্সফিকশন ও কাল্পনিক গল্প বর্ণনার নতুনধারা বাংলাদেশের চিত্রকলায় যুক্ত করেছেন। সায়েন্স ফিক্শন ও অ্যাবসার্ডিটি নিয়ে এককভাবে তিনি প্রথম এদেশে কাজ করেছেন। সেই সাথে লোকজ রং, রেখা ও কখনো কাহিনীকল্প তিনি ব্যবহার করেছেন চিত্রকলায়।
বর্তমানে সুফিবাদ নিয়ে ছবি আঁকছেন। ২০০৫ সালে নুহের নৌকা শিরোনামের ছবি থেকেই শুরু তাঁর সুফিবাদ চর্চার। তারপর বদলে গেছে তাঁর জীবনযাত্রা। বদলে গেছে তাঁর ক্যানভাস। ছবি এঁকে চলেছেন আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিল্লি, ব্যাংককে ইতিমধ্যে তিনি পাঁচটি সুফি দর্শননির্ভর চিত্র প্রদর্শনী করেছেন। তর্ক বাংলায় তাঁর প্রদর্শনীর ভাষা এই সুফি ঘরানারই। তাঁর প্রদর্শনীর শিরোনাম—আলিফ। তর্ক বাংলায় রনির এটি প্রথম শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
শিল্পী রনি আহম্মেদ দেশ-বিদেশে অসংখ্য একক ও যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। ২০০১ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে শিরোনামহীন এবং ২০০৫ সালে নুহের নৌকা শিরোনামে তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে ঢাকা বেঙ্গল লাউঞ্জে গডস অ্যান্ড বিস্ট একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে কক্সবাজারে মারমেইড আর্ট ফাউন্ডেশনে নূর ফ্রম দ্য সি, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম শিল্পকলায় বিস্তারের আয়োজনে উয়িংস অব বোরাক, ২০২০ সালে ব্যাংকক সোল সল্ট গ্যালারি এবং রয়েল হ্যারিটেজ হাউজ-১-এ বিগিনিং শিরোনামে একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালে বেঙ্গল লাউঞ্জে প্রদর্শীত হয় নূর-ই মুহাম্মদ শিরোনামে একক চিত্র প্রদর্শনী। ২০১২ সালে মারমেইড আর্ট ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে কসমিক টারটেল ভিজিটিং গ্রিন আর্থ নামক পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ কচ্ছপের ভাস্কর্য এবং মুরাল নির্মাণ করেন।
২০০৩ সালে যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন ওপেন ১২, ১৩, ১৪ ভেনিস বিয়েনালে, ইতালি; মিনিপ্রিন্ট ট্রিনালে, ইজিপ্ট; তামা মিনিপ্রিন্ট ট্রিনালে, জাপান। ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুয়াকা ট্রিনালে, ২০১৪ সালে গ্রিসের সানটোরেনি বিয়েনালে, ২০১৩ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স বিয়েনালে, ২০১৩ সালে ভেনিস বিয়েনালে ইউনাইটেড কালার অব ভেনেটনের সংগ্রহ থেকে। ২০১৩ সালে মারমেইড আর্ট ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে আর্ট মনোগ্রাফের বই দ্য কসমিক আর্ক প্রকাশ পায় ভেনিস বিনালে। ২০১৬ সালে নরওয়ের ওসলোয় মিসিং ওয়ান শিরোনামে সায়েন্স ফিকশান আর্ট প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। প্রদর্শনীর কিউরেটর ছিলেন নাদা রাজা, টেট মডের্ন। তিনি ৩ বার ঢাকা আর্ট সামিটে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে Lorenzo da Medici Award অর্জন করেন।
ছবি আঁকার পাশাপাশি রনি আহম্মেদ গল্প-কবিতা ও চিত্রকলাবিষয়ক গদ্য লেখেন। প্রকাশিত বই গল্পগ্রন্থ সেলিমের দুঃখের কাহিনী; কাব্যগ্রন্থ গোলাপের শব্দ, নুহের নৌকায় আমাকে শেষ দেখা গেলো; চিত্রকলা বিষয়ক গ্রন্থ দ্য কসমিক আর্ক ও সাক্ষাৎকার গ্রন্থ রনি আহম্মেদের সাক্ষাৎকার।
তর্ক বাংলা আয়োজিত শিল্পী রনি আহম্মেদের অনলাইন একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম আলিফ। এটি চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাল নাগাদ।
আলিফ: ১
ছবি: নূর
আলিফ: ২
ছবি: হজরত খিজির (আঃ) ও হজরত মুসা (আঃ) এর রহস্যময় যাত্রা
আলিফ: ৩
ছবি: গোলোপের দৃষ্টি
আলিফ: ৪
ছবি: হিজরত
আলিফ: ৫
ছবি: শামস ও রুমির বাগান
আলিফ: ৬
ছবি: নুহের নৌকা
আলিফ: ৭
ছবি: কনফারেন্স অব দ্য বার্ডস
আলিফ: ৮
ছবি: গাজী পীরের অদ্ভুত যাত্রা
আলিফ: ৯
ছবি: নূরের বন
আলিফ: ১০
ছবি: মা
আলিফ: ১১
ছবি: আদম হাওয়া
আলিফ: ১২
ছবি: রুহ
আলিফ: ১৩
ছবি: জিব্রাইল (আঃ) এর প্রত্যাবর্তন
আলিফ: ১৪
ছবি: মিকাইলের আবির্ভাব
আলিফ: ১৫
ছবি: সিদ্রাতুল মুনতাহা
সম্পাদকীয় নোট
তর্ক বাংলায় সুফিশিল্পী রনি আহম্মেদের প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করার কথা ছিল ৬ জানুয়ারি ২০২২। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণে যথাসময়ে প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। প্রদর্শনীটি ৯ জানুয়ারি ২০২২ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো।
এক কথায় অসাধারণ...............
Mohammad Asad
জানুয়ারি ১১, ২০২২ ১৮:২৫
আমার মনে হলো ছবিতে ভ্রমণ করে আসলাম,যে ভ্রমণ শেষ হলেও রেশ রয়ে গেছে। তবে শিল্পীর শিল্পভাবনা নিয়ে আর একটু বিস্তারিত জানা গেলে ভালো হত।
Karima Rakhi
জানুয়ারি ১১, ২০২২ ০০:৪৭