জেমস টাউন ও স্কাই-বার

 

গেস্টহাউসের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আমি আক্রা শহরের দিকে তাকাই। এ নগরীতে আসার উদ্দেশ্য একটি গ্রন্থের শেষ দুটি চাপ্টার লেখা। করিডরে আসার পথে ঘানা নামক পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি সম্পর্কে যা জানি, মনে মনে তা নিয়ে তর্পণ করি। একসময় দেশটি ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের তাঁবে। ঔপনিবেশিক জামানায় দেশটির পরিচিতি ছিল গোল্ড কোস্ট নামে। ১৯৫৭ সালে ঘানা নতুন নামে স্বাধীনতা হাসিল করে প্যান-আফ্রিকান নেতা কয়ামে নক্রুমার নেতৃত্বে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় ঘানাই হচ্ছে প্রথম দেশ, যে ব্রিটিশ সাহেবদের ইউনিয়ন জ্যাক ঝাণ্ডাটি গুটিয়ে রিটার্ন ফ্লাইটে বিলাত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল।

ঘানা সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না, অজ্ঞতার জন্য মনে মনে শরম পাই, কিন্তু এ নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। আমার পুরোনো দিনের একজন সুহৃদ ড. করডসো আক্রার লাগোয়া নেইভারহুড জেমসটাউনে বসবাস করছেন। তিনি নগরীর জরুরি কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাকে অবগত করার ওয়াদা করেছেন। বিকেল নাগান ড. করডসো এসে পড়লে আমরা নগর পরিক্রমাতে বেরোব। সকালটা আমার লিখে কাটানো উচিত।

নিচের খোলা বারান্দায় ঝরাপাতায় নিবিড় বাগিচাটির দিকে চোখ রেখে ল্যাপটপ পেতে বসে পড়ি। ডকুমেন্ট অপেন করে নিকট-অতীতে যা লিখেছি, তার খানিকটা পাঠ করি। একটি দুটি শব্দ টাইপ করি, কিন্তু আমার মন অন্য কিছুতেই এনগেইজ হতে চায়। মনে হয়, কে যেন দূর থেকে আমাকে অবলোকন করছে। কমপিউটারের স্ক্রিন থেকে ঘাড় তুলতেই দেখতে পাই, ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়ে এসটার আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখাচুখি হয় কিন্তু সে দ্রুত মুখ নামিয়ে নেয়।

গেস্টহাউসে ওঠার পরদিন দুপুরবেলা এসটারের সঙ্গে আমার যৎসামান্য বাতচিত হয়েছিল। বাগিচার সবুজ ঘাসে চাদর বিছিয়ে বিকিনি পরে সে সূর্যস্নান করছিল। তার বাবা পেশাদার কূটনীতিক, একসময় পোস্টেড ছিলেন আক্রা নগরীতে। এখানকার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এসটার সিক্সথ ও সেভেনথ্ গ্রেডে পড়াশোনা করেছে বছর আষ্টেক আগে। বর্তমানে তার বাবা সাইবেরিয়ার ব্লাডিভস্টকে পোস্টেড হয়েছেন। তবে মা কেলিফোর্নিয়াতে আছেন। সে কলেজে মাত্র এক বছর কাটিয়েপড়াশোনা ভালো লাগেনি বিধায় ব্রেক ইয়ার নিয়ে কৈশোরের চেনা দেশ ঘানায় বেড়াতে এসেছে।

আমি ফের দেহমনে তার দৃষ্টিপাত অনুভব করে ঘাড় তুলি। খুব সুন্দর করে হেসে এসটার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গত রাতের ঘটনায় আমি তার ওপর বেজায় বিলা হয়ে আছি, তাই চোখ নামিয়ে কাজে ফেরার চেষ্টা করি। রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে, আমি করিডর ধরে বেলকনিতে যাচ্ছিলাম, স্পষ্টত ড্রাংক হয়ে ফিরেছে এসটার। সে টলতে টলতে দেয়ালে ঠোক্কর খায়, চাপা স্বরে কাকে যেন অশ্লীল জবানে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তারপর আমার কাছে এসে রেগে ওঠে বলে, হোয়াই আর ইউ লুকিং অ্যাট মি...। কথা বলতে বলতে সে ফুঁপিয়ে উঠলে আমি, কামঅন এসটার, প্লিজ বি স্টেডি, বলি।

সে পার্স থেকে আকপেতেশির পাঁইট বের করে চুমুক দিয়ে তাকিয়ে থাকে দিশা ধরে। পাম-ওয়াইনের সাথে সুগার কেইনের মিশেল দিয়ে ডিসটিল করে তৈরি আকপেতেশিতে অ্যালকোহলের পরিমাণ এত বেশি যে, মাঝে মাঝে এ পানীয় পান করে পর্যটকদের মৃত্যু হতেও শোনা যায়। তো আমি তাকে ধরে তার কামরায় দোরগোড়ায় নিয়ে আসি। তখন বোতলটি ফ্লোরে পড়ে ভেঙে যায়। তাতে খেপে গিয়ে আই হেইট ইউ, বলে সে ঝট করে ঢুকে পড়ে তার কামরায়।

এসটার উঠে আমার টেবিলের কাছে এসে বলে, ক্যান আই সে হ্যালো টু ইউ? আমি তার দিকে তাকাই, মিনি স্কার্টের সাথে ম্যাচ করে লো-নেক টপ পরেছে। সে চেয়ার টেনে বসলে আমি তার নানাবর্ণে রঞ্জিত চুলের সাজ আগ্রহ নিয়ে দেখি। সে মুখে ফের হাসি ফুটিয়ে বলে ম্যান, হোয়াটস্ আপ? জবাবে আমি তার বর্ণাঢ্য চুলের প্রশংসা করে বলি, উইথ অল দিজ কালারফুল হেয়ার-ডু, ইউ লুক লাইক অ্যান একজোটিক বাটারফ্লাই।

লাজুকভাবে হেসে দু-হাতে চুলের গুচ্ছ চুড়ো করতে করতে চোখ আধবোজা করে এসটার কী যেন ভাবে। আমি এবার তাকে কী বলা যায়তা নিয়ে নীরবে ভাবি। সে ফের কথা বলে, ইউ নো মাই মাদার, শি ইজ আ রিয়েল বিচ্। সে আমার হ্যাপি পিলগুলো এখনো ডিএইচএল করে পাঠায়নি। সকালবেলা হ্যাপি পিল না নিলে আমার মেজাজ এমন তেড়িয়া হয়ে থাকে। আমি জানতে চাই, উড ইউ লাইক টু টেল মি আবাউট ইয়োর মাম? কী করেন তিনি, এসটার? এ প্রশ্নে তার মুড সম্পূর্ণ বদলে যায়, ফুঁসে ওঠে সে জবাব দেয়, আমার মা অপেরা সিংগার। এমন হেঁড়ে গলায় সারা দিনমান বাড়িতে সে অপেরা গানের প্র্যাকটিস করে যেআমি একটা বিড়ালও পুষতে পারি না। আমার ড্যাডি যে সেপারেশন নিয়ে একা ব্লাডিভস্টকে গিয়েছে, তার পেছনেও কারণ আছে। হোয়াট ইজ দ্যাট, হোয়াট ইজ দ্য রিজন এসটার, ডু ইউ ওয়ান্ট টু টেল মি? সে নিরাসক্তভাবে জানায়, হার্ট অ্যাটাকের পর থেকে আমার ড্যাডি আর ভায়েগ্রা নিতে চাচ্ছিল না, কারণইট উড হ্যাভ অ্যান অ্যাফেক্ট অন হিস ডেলিকেট হার্ট কন্ডিশন। তো সেপারেশন হওয়াতে মা এর পোয়াবারো হয়েছে, শি ইজ স্ক্রুয়িং অ্যারাউন্ড আদার অপেরা গাইজ। আমি এবার আলাপচারিতার রাশ টেনে বলি, তোমাদের পারিবারিক বিষয়-আশয় আমি শুনতে না চাইলে তুমি মাইন্ড করবে কি, এসটার? কাঁধ ঝাঁকিয়ে সে জবাব দেয়, নট অ্যাট অল, আমি আর কিছু না বলে চোখ নামিয়ে টাইপ করতে শুরু করি।

লাঠি ভর দিয়ে বারান্দায় উঠে আসেন ড. করডসো। তাঁর তো বেলা পাঁচটার দিকে আসার কথা। এখন বাজে দুইটা পঁয়তাল্লিশ। আমার চোখেমুখে সওয়াল দেখতে পেয়ে ভারি সুন্দর করে হেসে বলেন, গেট আপ, এন্ড গেট রেডি কুইক। আক্রা নগরীটি বিরাট, দেখার স্পটও অনেকগুলো। তাঁকে বসিয়ে রেখে আমি কামরায় যাই প্রস্তুতি নিতে। বাইরে বেরোনোর ধড়াচূড়া পরতে পরতে আমি তাঁর কথা ভাবি। প্রথম দেখা হয়েছিল ড. করডসোর সঙ্গে বোধ করি ১৯৯৩ সালে। আমি ইউনিভারসিটি অব পেনসিলভানিয়াতে একটি সামার কোর্স করছিলাম। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেটের রিসার্চ নিয়ে মেতে ছিলেন। অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন, তাই তাঁকে প্রতিদিন ঘণ্টা পাঁচেক লাইব্রেরি ওয়ার্কের পরও আরও দুটো অড-জব করতে হতো। ওই ইউনিভারসিটিতে আমি ছিলাম নতুন, পথঘাট চিনতাম না, আর্থিক সঙ্গতিও ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। হাজারটা ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমাকে সময় দিতেন, খোঁজখবর করে ডেটা এনট্রির একটি ছোটা-কাজও জুটিয়ে দিয়েছিলেন। গেল বছর বিশেকে তাঁর সাথে আরও দুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। একবার জোহানেসবার্গে ক্রীতদাস প্রথার ওপর একটি সেমিনারে, অন্যবার সিয়েরা লিওনে, ওখানে এসেছিলেন তিনি শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাস ব্যবসায়ীদের সাথে যে সব স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ দালাল ও ফঁড়েরা কাজ করততাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে। প্রতিবারেই তাঁকে আরেক দফা বৃদ্ধ হতে দেখেছি।

নিচে নেমে দেখি, ড. করডসো একটি সোফায় গাঁট হয়ে বসে চা পান করছেন। তিনি পেয়ালাটি মুঠো করে খুব সাবধানে ধরেছেন, তার হাত দুটি কাঁপছে থেকে থেকে। পারকিনসন ডিজিজ ছাড়া বছর দুয়েক আগে তিনি স্ট্রোকেরও শিকার হয়েছিলেন, ফলশ্রুতি বাচনভঙ্গিতে এসেছে জড়ানো অস্পষ্টতা। আমি সাত-পাঁচ ভেবে তাঁর বয়স সম্পর্কে জানতে চাই। মৃদু হেসে তিনি জবাব দেনহতে পারে পঁচাত্তর কিংবা আশির মাঝামাঝি কোনো জায়গায়। নিজের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের উল্লেখ করে আরও যোগ করেন, আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান কৌমের মধ্যে শিশুদের জন্মতারিখ লিখে রাখার কোনো চল নেই, তাই সঠিক বয়স জানতে পারাটা কঠিন, জানার প্রয়োজনই-বা কী।

যেহেতু হাতে সময় আছে, আমি আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান কৌম সম্পর্কে আরেকটু জানতে চাই। ড. করডসো পেয়ালা নামিয়ে রেখে কী যেন ভাবেন। রুপালি চুলে বৃদ্ধকে অভিজাত দেখায়। কিছুক্ষণ নীরবে ভেবে তিনি জবাব দেন, আফ্রো-ব্রাজিলীয়দের গোত্রটি তাবন নামে পরিচিত। এরা আদিতে ছিল ইউরোবা সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্তুগিজ শ্বেতাঙ্গরা সর্বপ্রথম পালতোলা জাহাজে ঘানার উপকূলে এসে ল্যান্ড করেছিল ১৪৭০ সালে। নির্দিষ্ট করে সনতারিখ বলা মুশকিল, তারা এখানকার কিছু কৃষ্ণাঙ্গকে শিকল দিয়ে বেঁধে ক্রীতদাস হিসেবে চালান দেয় ব্রাজিলে, সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে। তো কিছু তাবন ক্রীতদাস উনিশ শতকে তাদের পূর্বপুরুষদের স্বদেশ ঘানায় ফিরে আসতে সমর্থ হয়। এরাই এ দেশে ঔপনিবেশিক প্রশাসনের খাতাকলমে আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান নামে পরিচিত। আমি এদেরই উত্তর পুরুষ। আমরা নিজেদের আফ্রে-ব্রাজিলিয়ান বলি না, এখানে আমাদের পরিচিতি তাবন।

বেশ খানিকটা কথা বলে মনে হয় ড. করডসো হাঁপিয়ে উঠেছেন। তিনি লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বলেন, চলো তো দেখি সুলতান, আমরা বেরিয়ে পড়ি, এত কথাবার্তা বলার কী আছে, ব্রাজিল থেকে জাহাজে করে ফিরে এসে কোথায় ক্রীতদাসরা ল্যান্ড করেছিল, তারপর কী সমাচারসবই তোমাকে সরেজমিনে দেখাব। লেটস্ গেট আউট ফ্রম হিয়ার, ওকে।

ট্রাফিক ডিঙিয়ে গাড়িটি আমাদের নিয়ে আসেআক্রা মেট্রোপলিটনের লাগোয়া শহরতলিসমুদ্রকুলবর্তী জেমস টাউনে। লাইট হাউসের সামনে আমরা গাড়ি থেকে নামি। বাতিঘরটি গড়পড়তা অন্যান্য বাতিঘরের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। ড. করডসো তার গোড়ায় দাঁড়িয়ে একটি ভাসমান বয়া দেখিয়ে জানান, ঠিক ওখান থেকে পর্তুগিজরা জাহাজে করে ক্রীতদাসদের প্রথম চালান নিয়ে যায় তাদের উপনিবেশ ব্রাজিলে। জাহাজটির নাম কী ছিল, তার কাপ্তেন কে ছিলেনএসব তথ্যের জন্য আমি ব্রাজিল ও পর্তুগালের আর্কাইভগুলোতে ধর্না দিয়েছি, বোধ করি ঘানার কুচকুচে কালো কৃষ্ণাঙ্গ বলে আমাকে তথ্য ডিনাই করা হয়েছে।

শুনে আমি প্রশ্ন করি, আপনি তো ঘানা থেকে পর্তুগিজদের কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ অপহরণ করা নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন, ভাইটাল কোনো তথ্য কি আপনি পাননি? একটু অন্যমনস্ক হয়ে তিনি জবাব দেন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যে আমি একেবারে পাইনি, তা নয়, এসব দিয়েই তো পোস্টডক্টর‌্যাল গবেষণার পত্র তৈরি করেছি। সবচেয়ে জরুরি যে তথ্য আমি পেয়েছি, এসব তথ্যের প্রাইমারি সোর্স হচ্ছে আমার পরিবার, আফ্রো-ব্রাজিলীয় কৌমের বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিরা তাদের মেমোরি থেকেও আমাকে কিছু তথ্য দিয়েছেন।

ড. করডসো দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানান, ব্রাজিলে বাসরত কিছু ক্রীতদাসের সত্তরটি ফ্যামিলি সালিসবেরি নামে একটি জাহাজে করে ১৮৩০ সালে তৎকালীন গোল্ড কোস্টে এসে নোঙর করেসমুদ্রে এখন যেখানে বয়াটি দেখতে পাচ্ছ, ঠিক ওই জায়গায়। জেমস টাউনের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় উষ্ণ ওয়েলকামে আমাদের পূর্বপুরুষদের আশ্রয়ের সংকুলান করে দেয়। একই প্রক্রিয়ায় ১৮৩৫ সালে আরও কয়েকটি জাহাজে করে হাজার আষ্টেক ক্রীতদাস ফিরে আসে গোল্ড কোস্ট বা হাল জামানার ঘানায়।

আমি এবার কৌতূহলী হয়ে জানতে চাই, আপনার পরিবার কীভাবে ব্রাজিল থেকে ঘানায় ফিরে এল, আই অ্যাম কিউরিয়াস টু লার্ন আবাউট দিস্ ড. করডসো। তিনি জবাব দেন, আমার পূর্বপুরুষের পরিবার ছিল সালিসবেরি জাহাজে করে প্রথম চালানে আসা সত্তরটি পরিবারদের মধ্যে একটি। এরা সঙ্গোপনে ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। ব্রিটিশরা জাহাজ সরবরাহ করে তাদের স্বদেশ ফিরতে সাহায্য করে। প্রথম চালানের অনেকেই পেশায় ছিলেন দক্ষ দর্জি। এরা ঘানায় ফিরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য ইউনিফর্ম বানানোর কাজে নিযুক্ত হন।

আমার পরবর্তী প্রশ্ন হয়, ব্রিটিশরা কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের কেন সাহায্য করেছিল, হোয়াট ওয়াজ দেয়ার ইন্টারেস্ট? ড. করডসো গাড়ির দিকে ফিরতে ফিরতে বলেন, ব্রিটিশদের ইন্টারেস্ট কী ছিল, এটাই তো আমার গবেষণার মূল বিষয়বস্তু, ইউ রিয়েলি নিড টু রিড মাই রিসার্চ পেপার। চলো, এবার তোমাকে ব্রাজিল হাউসটা দেখাই।

মুখখানা আমসি করে গাড়িতে বসে থাকেন ড. করডসো। আমি ফের তাঁকে প্রশ্ন না করে পারি না, জানতে চাই, ব্রিটিশদের উপনিবেশ গড়ে তোলার আগে কি ঘানার মানুষজনদের ইউরোপীয়দের সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল? তিনি বিরক্ত হয়ে জবাব দেন, অবকোর্স লক্যাল আফ্রিকানস্ হ্যাড সাম বিজনেস টাইজ উইথ ইউরোপিয়ানস। লিসেন, ঘানায় ব্রিটিশদের গোল্ড কোস্ট প্রশাসনের মেয়াদ ছিল ১৮২০ থেকে ১৯৫৭ সাল অব্দি। ব্রিটিশরা কিন্তু ঘানার উপকূলে নোঙর করে ১৫৫৩ সালে। তারও আগে ১৪৭০ সালে পর্তুগিজরা এখানে এসেছিল, ১৫৯৫ সালে ওলন্দাজরাও এখানে এসে ব্যবসা-বাণিজ্যের চেষ্টা করে। দিনেমার ও জার্মানরাও এখানে নোঙর করেছিল একাধিকবার স্বর্ণের সন্ধানে। দ্য হিস্টি হিয়ার ইজ প্রিটি কমপ্লিকেটেড। আমার রিসার্চ পেপার ছাড়া আরও কিছু রেফারেন্স বইও আমি তোমাকে জোগাড় করে দেব। অল ইউ নিড টু ডু ইজ সাম রিডিং...।

গাড়ি এসে একটি হলুদ রঙের রানডাউন দালানের সামনে দাঁড়ায়। বাড়িটি ব্রাজিল হাউস নামে পরিচিত। আমরা নামি না, গাড়ির জানালা দিয়ে দেখিয়ে ড. করডসো বলেন, আফ্রো-ব্রাজিলীয় কৌম ঘানার সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েও তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে। প্রতি শনিবারে এখানে এসে জড়ো হয়ে ব্রাজিলীয় কায়দায় পার্টি-পরবের আয়োজন করে থাকে। এরা অনেকেই দেখাসাক্ষাৎ হলে এখনো পর্তুগিজ ভাষায় কমো এসতা বলে পরস্পরকে সম্বোধন করে।

সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে গাড়িটি সামনে বাড়ে। তাল ও নারকেলে ঘন হয়ে আসা একটি একটি কুঞ্জবীথির কাছে ড্রাইভার গাড়িটি দাঁড় করায়। ড. করডসো এবারও নামেন না, তিনি জানালা দিয়ে দেখান আরেকটি রঙজ্বলা ক্ষয়িষ্ণু ঘর। এটাই তাঁদের পারিবারিক বসতবাড়ি। আদিতে ছিল পামগাছের পত্রালিতে ছাওয়া কুঁড়েঘর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সময় তাঁর পিতা ও পিতৃব্য ব্রিটিশ মিলিটারির ইউনিফর্ম সাপ্লাইয়ের কাজ করে বড় অংকের উপার্জন করেন। তা দিয়ে তাঁরা তৈরি করান একান্নবর্তী পরিবারের জন্য এ কোঠাবাড়িটি। ড. করডসো বাড়ির দেয়ালে আঁকা একটি ফ্রেস্কো দেখিয়ে বলেন, ভালো করে তাকিয়ে দেখোএ ফ্রেস্কোতে ফুটে আছে ব্রাজিলের মোটিফ।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, ড. করডসো চাপাস্বরে স্থানীয় ভাষায় কী যেন বলাবলি করেন। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে আমাকে জানান, আফ্রো-ব্রাজিলীয় কৌমের কবরস্থানটি তোমাকে দেখাতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু আঁধার হয়ে আসছে, সাপখোপ আছে, সমাধিফলকগুলো পড়া যাবে না, এ ফলকগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিধৃত হয়ে আছে এ সম্প্রদায়ের মানুষজনের ধারাবাহিক অবদান।

তিনি ড্রাইভারকে আক্রা নগরীর নর্থ এয়ারপোর্ট রোডের দিকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেন। চুপচাপ বসে থেকে আমি স্বস্তিবোধ করি। তাঁর সুপারিশ মোতাবেক রেফারেন্স বইগুলো অবসরে ঘাঁটতে আমার কোনো আপত্তি নেই, গাড়িতে বসে তাঁর সম্প্রদায়ের মরহুমদের আত্মার শান্তি কামনা করতেও রাজি আছি, তবে সাঁঝবেলা মামবা সাপ উপদ্রুত কবরস্থান জিয়ারতের আগ্রহ আমার জিরো।

আমরা এয়ারপোর্ট রোডে আলতো টাওয়ারের সামনে এসে পৌছি। পঁচিশতলার রুফটপ জুড়ে স্কাই-বারের দারুণ রকমের রিল্যাক্স পরিসরটি আমার ভালো লাগে। ড. করডসো ডিনারের জন্য আগে থেকে রিজার্ভেশন করিয়ে রেখেছেন। তিনি আমাকে নিয়ে আসেন ছাদের কার্নিশের কাছাকাছি। আমরা সুরক্ষা রেলিংয়ের কাছ ঘেঁষে নগরীটির দিকে তাকাই। দূরে দুটি সমুদ্রসৈকততথা লাবাডি ও ককরোবাইতি বিচের আলো ছিটকানো ছাতা ও ইজিচেয়ারে উপদ্রুত বালুচরগুলো পরিষ্কার দেখতে পাই। ড. করডসোর মোবাইলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁর মেয়ের কল আসে। তিনি টেলিফোনে কথা বলতে বলতে ভেতরের হলরুমে চলে যান।

লবিতে একাকী ফেরার পথে দেখা হয় এসটারের সঙ্গে। সে ঘানার একটি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারকে স্কাই-বারে ডিনারে নিয়ে এসেছে। দুটি টিনএজার ছেলেমেয়ে নিয়ে মহিলা একটি টেবিলে বসে পড়ছেন। তার স্বামী মনে হয় অন্ধ, লাঠি ঠুকে ঠুকে এসটারের কবজি মুঠো করে খুব ধীরে ধীরে টেবিলের দিকে আগাচ্ছেন। আমার দিকে চোখাচুখি হতেই সে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওয়েভ করে হ্যালো বলে। ওরা সকলে বসে পড়লে আমি পরিচিত হওয়ার জন্য তাদের টেবিলে আসি। এসটারের পরিবার যখন আক্রায় বসবাস করত, তখন এ মহিলা তাদের বাসায় হাউসকিপার হিসেবে কাজ করতেন। পুরুষটির দায়িত্ব ছিল বাগানের দেখাশোনা করা । হ্যাভ আ ভেরি নাইস ইভিনিং ইউ অল, বলে আমি তাঁদের টেবিল থেকে ফিরে আসি।

ড. করডসো এখনো ভেতরের হলকামরায় টেলিফোনে কথা বলছেন। একা বসতে ভালো লাগে না, তাই চলে আসি সুরক্ষা রেলিংয়ের কাছে। মৃদু পায়ে এসটারও এসে কাছে দাঁড়ায়। সে ই-সিগ্রেটটি লাইট করে বলে, হোয়াই আর ইউ সিটিং এলোন, কাম এন্ড জয়েন আস ফর ডিনার, বি মাই গেস্ট। আমি ড. করডসোর সঙ্গে জরুরি আলাপের অজুহাত দিতে অপারগতা প্রকাশ করি।

তো এসটার বলে, ইউ নো, আই কনসিডার দিস আফ্রিকান ফ্যামিলি অ্যাজ মাই রিলেটিভ। আক্রায় যখন আমি সেভেনথ্ গ্রেডে পড়তাম, তখন আমার দিনকাল এত খারাপ কেটেছে, কী বলব, আমার পেরেন্টসদের দুজনেই সারা দিন অ্যামবেসির ডিমান্ডিং চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। সন্ধ্যাবেলা হয় তারা ককটেল বা ক্লাব নিয়ে মেতে থাকতেন। ফিরতেন হামেশা ড্রাংক হয়ে মাঝরাতে। ঘরে আমি একাই থাকতাম। ভয় লাগত, আমার যে ডিপ্রেশন হচ্ছে, মা এটা আমলেই আনতেন না, হ্যালোসিনেশনের ব্যাপারটা তখন শুরু হয়, একা শুয়ে থাকতে ভয় লাগত, সারা কামরাজুড়ে উড়ে বেড়াত জায়েন্ট সাইজের পতঙ্গ। রাতে ঘুমাতে পারতাম না।

মা-কে এসব বললে তিনি বিশ্বাস করতেন না। একা ভীষণ ভয় পেতাম। আমাদের হাউসকিপার এই মহিলা বেডরুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতেন। তার স্বামী কোথা থেকে গোপনে এনে দিয়েছিলেন একটি শিকড়, তার নির্যাস চা-এর সাথে মিশিয়ে খেলে শান্তি লাগত। তখন থেকে আমি অনুভব করতে শুরু করি, দে আর মাই রিয়েল ফ্যামিলি।

কেন জানি জিজ্ঞেস করে বসি, এসটার, তোমাদের এই গার্ডেনার ভদ্রলোক তখন অন্ধ ছিলেন কি? কিছু মনে করার চেষ্টা করে সে জবাব দেয়, না, অন্ধ ছিলেন না, তবে চোখে কম দেখতেন, তার চোখ দিয়ে জল ঝরত, বাগানে কাজ করতে পারতেন, আমার খরগোসগুলোর দেখভাল করতেন। জানি না তার কী হয়েছে, এখন তো তিনি কিছুই দেখতে পান না।

প্রতিক্রিয়ায় আমি বলি, উনার হয়তো গ্লুকোমা হয়েছে, চোখের ডাক্তার দেখিয়েছেন কি? এসটার চিন্তিতভাবে বলে, জানি না, বাট আই নো ওয়ান থিং ইন মাই হার্ট, হি লাভস্ মি লাইক হিজ ডটার, দেখিআমার স্টুপিড মা যদি টাকা পাঠায়, আমি তাকে আই-ডক্টর দেখাতে নিয়ে যাব। কেন জানি আমি এসটারকে ধন্যবাদ দিয়ে বলি, এই যে তুমি তাদের আক্রার একটি অত্যন্ত এক্সপেনসিভ আপস্কেল জায়গায় ডিনারে নিয়ে এসেছ, দিস ইজ ইনডিড ভেরি নাইস অব ইউ এসটার।

মোবাইল মুঠোয় চেপে ধরে কাঁপতে কাঁপতে ড. করডসো ফিরে আসেন। তাঁর চোখমুখে খেলছে চাপা উত্তেজনা, তিনি কাঁপুনি থামার জন্য একটু সময় নিয়ে জানান, আফ্রো-ব্রাজিলীয় কৌম সম্পর্কে লেখা একটি প্রবন্ধ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণামূলক এক জার্নালে সাবমিট করেছিলেন, তারা তাঁকে ইমেইলে ধরতে না পেরে মেয়ের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছে। তাঁর মেইলবক্স বোধ করি ফুল, এটা ক্লিনআপ করতে হবে। তবে মোদ্দা কথা হচ্ছে, জার্নালটি যৎসামান্য সম্পাদনা করে তাঁর প্রবন্ধটি ছাপতে রাজি হয়েছে।

আমি কংগ্রাচুলেশনস্ বলে ঘটনাটি সেলিব্রেট করতে চাই। ড. করডসো উঠে একটি টেবিলে বসতে বসতে হাঁক দিয়ে খোদ রাঁধুনে শেফকে ডেকে পাঠান। প্রৌঢ় এ রাঁধুনের নাম আব্দুল মায়ীদ। দেখতে অনেকটা মন্ত্রী গবু চন্দ্রের মতো গোলগাল চেহারার ব্যক্তিটির জন্ম ঘানায়, তবে তার পূর্বপুরুষ ১৯২১ সালে সিন্ধু প্রদেশের রান অব কচ থেকে আক্রাতে অভিবাসী হয়ে এসেছিলেন। ড. করডসো তাকে হিন্দুস্থানি কায়দায় চিংড়ি মাছের বিরিয়ানি রান্নার হুকুম দিয়েছেন। খানা প্রায় প্রস্তুত, আমি তাকে সেলিব্রেট করার জন্য খোদ পর্তুগালে তৈরি ভিনো ভেরদে নামে একটি চিলড্ ওয়াইন সরবরাহ করতে অনুরোধ করি।

স্টেজে একটি লাইভ ব্যান্ড মারিমবা বাজিয়ে আওয়াজ দেয়। শিল্পীরা যে সকলে জেমস টাউনের আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান কৌমের সন্তান, এ তথ্য জানিয়ে কাঁপা হাতে ড. করডসো বাতাসে ভি চিহ্ণ আঁকেন।

পরিবেশিত হয় ভিনো ভেরদে, তবে ড. করডসোর হাতটি এখনো কাঁপছে, তাই তিনি ওয়াইন গ্লাস ধরতে চান না, শেফ স্বয়ং হাতলওয়ালা কফিমগে গ্লাসের ওয়াইনটুকু ঢেলে তুলে দেন তাঁর হাতে। হাতল শক্ত করে দু-হাতে চেপে তিনি কফিমগে চুমুক দেন। আমরা খেতে খেতে টুকটাক কথা বলি। শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা আফ্রিকার স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ দালালদের মাধ্যমে কালো মানুষদের অপহরণ করত। ড. করডসোর পোস্টডক্টরাল রিসার্চের ফোকাস হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ দালাল সম্প্রদায়ের আচরণ, তিনি আফসোস করে বলেন, সাম ব্ল্যাক আকাডেমিকস্ ইন ঘানা হেইটস্ মি ফর দিস্ । তারা চায় না আমি কৃষ্ণাঙ্গ দালালদের নিয়ে গবেষণা করি। এ জন্য তারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্থায়ী টিচিং পজিশনে টেনিওরসহ চাকরি পেতে বাঁধা দিয়েছে। তিনি যে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে হাল ছেড়ে দেননি, এ বয়সেও নিজে স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে গবেষণা জারি রেখেছেনএ জন্য আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।

ব্যান্ডের উৎসাহব্যঞ্জক বাদনে যুক্ত হয় সমবেত ভোকাল। শ্রোতাদের মধ্যে যাদের ব্রাজিলের নৃত্যগীতের সাথে পরিচয় আছে, তাদের বুঝতে বাকি থাকে না, এ বাদ্যবাজনা ও নৃত্যের ব্রাজিলীয় শিকড় সম্পর্কে।

লিরিকের কথাগুলোতে যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ব্রাজিলে ব্যবহৃত পর্তুগিজ শব্দতা উল্লেখ করে ড. করডসো জানান যেএ নৃত্য-আলেখ্যে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে জাহাজে করে পূর্বপুরুষের স্বদেশ ঘানাতে ফিরে আসার হ্যাপি ইমোশন। তাঁর কথা জড়িয়ে আসছে। আমি তাকিয়ে তাঁর বয়সের ভারে জরাগ্রস্ত হওয়ার কথা ভাবি। তখনই সচেতন হই যেআমিও হাঁটছি বয়সের ভাটিতে। ডিনার শেষ করে উঠে পড়েছে এসটার। অতিথি পরিবারটির সাথে হাসিঠাট্টায় খোশমেজাজে সে অন্ধ মানুষটির হাত মুঠো করে ধরে হেঁটে যেতে যেতে খুব সিগ্ধ করে হেসে আমাকে মাথা ঝুঁকিয়ে বাও করে।

একমনে ড. করডসো লাইভ মিউজিক শুনছিলেন, হঠাৎ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, সুলতান, তুমি তো সাব-কালচার স্টাডি করা পছন্দ করো। জেমস টাউনের আফ্রো-ব্রাজিলীয় কৌমের সংস্কৃতি হচ্ছে সাব-কালচাররের পারফেক্ট একটি উদাহরণ। তুমি যদি এদের নিয়ে নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করতে চাও, জাস্ট লেট মি নো, আমি মাঠপর্যায়ে সব বন্দোবস্ত করে দেব। তাঁর প্রস্তাব শুনে বয়সের প্রভাবে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকা আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠি। মাঠপর্যায়ে আরেকটি গবেষণা করার তন্দুরুস্তি আমার আছে কি নাএ বিষয়ে ঠিক নিশ্চিত হতে পারি না। তবে বৃদ্ধকে মুখের ওপর না বলতেও দ্বিধা হয়। তাই মিনমিনিয়ে বলি, আই উইল থিং অ্যাবাউট ইট।

আমাদের খাবারদাবারের পালা শেষ হয়ে আসে। ড. করডসো আমার দিকে নিরিখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেন, লিসেন, লেট মি টেল ইউ সামথিং ট্রুথফুলি। তিনি পজ নিলে আমি উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে থাকি। গলাখাঁকারি দিয়ে তিনি জানান, পারহেপ্স উই ইউল নেভার মিট আপ অ্যাগেইন, আমাদের বয়স হয়তো আরেকবার দেখাসাক্ষাতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।

জবাবে আমি মৌন থাকি। লাঠিটি পাকড়ে ধরে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে ফের বলেন, কাম অন সুলতান, শেষবারের মতো আমরা এক সাথে রাতের আক্রা নগরীর ভিউটি দেখে নেই। আমরা অতঃপর এসে দাঁড়াই সুরক্ষা রেলিংয়ের কাছে। তিনি উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে বলে ওঠেন, লুক অ্যাট দিস জুয়েল বউল উই লাভিংলি কল আক্রা। আমি অজস্র বাতিতে দীপ্যমান রত্নভর্তি গামলার মতো নগরীটির দিকে তাকাই।