
পৃথিবীর ঈশ্বর ও অন্যান্য কবিতা
তুমি কি দেখতে পাও?
শোল মাছের ঝোল রাঁধছিলেন মা আমার
তরতরে ঝোল
ঝলমল ঝোল
শুকনা মরিচে রান্না করা সেই ঝোলের ভেতর থেকে
স্মৃতির টুকরোগুলো
সসারের বেগে ফ্লাই করছে আমার মনে,
আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি সেই উড়ন্ত
অবিশ্বাস্য স্মৃতির শৈশব,
জ্বলজ্বলে কৈশোরের দিন, অমলিন নিসর্গের রূপ
আমার সিজদার ভেতর থেকে আমি উড়ে যাচ্ছি
পরমাণু খাসলত নিয়ে বেকসুর
সুচতুর মার্কিনী বিমান যেন,
পলকের চেয়েও পলকা সেই পলায়ন
নামাজের ভোরের সংসার থেকে,
ঘোরের ধূসর জগতের ঘুমে—
তুমি কি দেখতে পাও এই পলায়ন,
এই পরিযায়ন আমার?
খেদোক্তি
ইতিহাসের পাতাগুলো বড্ডবেশি খর্খরে,
বাংলা কখনো এমন আর্দ্রতাহীন ছিলো না,
ঘূর্ণি ছিলো না লো-হাওয়ার,
রোদে পোড়া ছিলো না জনজীবন!
আশ্চর্য হওয়ার মতন কোনো মানবিক চেতনার বৃক্ষ
জন্মায়নি এ-দেশের লোকজ সত্তায়—
কেবল অভিনব চিন্তার কিছু সবুজ পত্রশোভিত গাছ
আমরা দেখে আসছি সুপ্রাচীনকাল থেকে।
এর বাইরে আমাদের কোনো খেদোক্তি নেই।
জেগে উঠলাম
জেগে উঠলাম,
সে কোন অতল থেকে?
ঘুম থেকে নাকি কোমা?
জগৎ সংসার থেকে? পরাজগতের মর্মে—,
মৃত্যুর গহন থেকে জেগে দেখি যেন সত্য নয় এ-জীবন!
এ নয় সেই পুরোনো পৃথিবী আমার,
কচি সবুজ ঘাসের দরোজা ঠেলে রোজ যে সূর্য
উঠতো পুবের আকাশে আমার
এ-দিন কি সেই চিরচেনা অমলিন দিন?
জেগে উঠেছি স্বপ্নের মধ্যে আরেক স্বপ্নের ঘোরে
পরাস্বপ্নের তেলেসমাতিসহ—
‘কুন’ বললে যখন সব হয়ে যেতো জাদুর মতন
বাতাসার গন্ধে ভরপুর তাজা সবুজ ম-ম ঘ্রাণের পৃথিবী
আজ সে-রকম দিন নয়,
খরখরে, খসখসে, চিমসে, চটচটে আঠালো,
যেন নরকের কনসেপ্টে বানানো কোনো মৃত্যুপুরী—
বারুদের গন্ধে ধা ধা করে বেড়ে যাচ্ছে রক্তচাপ,
বাড়ছে পণ্যের দাম, ডিজাইনের নহর
নরক গুলজার করছে—
জেগে দেখি এই সব রগরগে দৃশ্য!
অমানবিক, অনৈতিক, অভব্য চারদিকে খেলা করে
আমি তাকে দেখিনি কখনো,
কোথাও দেখিনি তাকে, তবু আজ আমারি সামনে
নতুন দৃশ্য, নতুন কবিতার পৃথিবী নির্মিত হলো!
এই প্রথম আমার মজ্জমান চেতনার জলরাশি ভেদ করে
আমি নতুন পৃথিবী—
জেগে উঠলাম।
পৃথিবীর ঈশ্বর
তোমার বিস্ফারিত চোখের তারার মতো ভোর
আমাকে বসালো নয়নতারায়!
ভোর শেষ হলে দিগন্ত উন্মোচন করো তুমি
তুমি কে হে?
কখনো দেখিনি।
রোদের দরোজা খুলে যে আসে নিপুণ কারিগর!
তোমার শস্যময় সময়
আমাকে উগরে দেয় রাজনৈতিক বিস্ফোরণে
তুমি কি সেই লেলিহান শিখায় বসে আছো?
তুমি বসে আছো অবিনশ্বর ঢঙে
রঙে-চঙে পৃথিবীর অধীশ্বর!
আমি নীল নয়ন জ্বেলে নশ্বর পৃথিবীর তারা খুঁজে নেবো।
রায়
হৃদয় গুঁড়িয়ে দেবার মতো ভাবনাগুলো
রোদ পিঠে নিয়ে বাতাসের কার্পেটে চড়ে তক্কে তক্কে ঘুরছে,
তুমি দেখতে পাও না তাকে,
সে থাকে তোমার কোমল হৃদয়ে,
যেন সে করোনা ভাইরাস!
আমি দেখতে পাই,
কারণ আমার রেটিনার ছাদে কল্পনার বাস!
খুবই নাজুক তার ভালোবাসা
তবে তুমি যদি বিশ্বাস করো
তোমার জলজ শ্যাওলায় ছাওয়া হৃদপিন্ড আমি ভেঙেছি
তাহলে সুপ্রিম কোর্টের আশ্রয় নিতে পারো।
আমার কোনো ভাবনা নেই আর!
হৃদয় গুঁড়িয়ে দেবার জন্যই আইনি খামগুলো নির্মিত হয়
যুগে যুগে;
রায় তোমার পক্ষে গেলেও
ভাঙা হৃদয় কখনো জোড়া লাগে না যে!
অরণ্য
তোমাদের সবুজ অন্তর থেকে
একটি করে বৃক্ষ বুনে
গোটা পৃথিবী অরণ্য করে তোলো!
গাছের ভেতরে প্রাণ আছে
কিলবিল করা স্বপ্নের মতন শাক-সবজির গন্ধের ভোর
প্রতিদিন আমি তাদের ফিসফিসে কথোপকথনের ঢেউয়ে
নাচতে নাচতে আমিই রচনা করি।
তোমরা কি দেখোনি ম্যান্ডেলার সংগ্রাম
আর মানুষ-ভাবনা!
তোমরা কি দেখোনি বৈভবহীন করেছি তাকে
যে ঘোষণা করেছিলো তার নীল রক্তের নীলিমা!
তোমরা কি দাম্ভিকের রক্তাক্ত পতন দেখোনি!
সবুজ আর সুষমা ধ্বংসকারীদের জন্য
পরমাণু বোমা অপেক্ষা করছে কি?
তোমাদের অন্তর থেকে সবুজ পত্রালি শোভিত
সবুজ আকাশ জন্ম নিক মহাকাশের
অনন্ত অঙ্গনে;
আকাশ তো সবুজেরই সহোদর
আমাদের স্বপ্ন আর সৌহার্দ্যের বাতিঘর।
আমি তাকে রোজ বর্ণিল করি যেন
মানুষ বোঝে যে
তাঁরাই প্রকৃত ভিনগ্রহী!
তোমাদের সবুজ হৃদয় খোলো!
মন বলছে
কখন কোথায় মরে পড়ে আছি
কেউ দেখছে না!
তাহলে কি আমিও দেখতে পাইনি!
মন বলছে আমি যখন পড়ে যাই
তখন আসর কাল!
কাত হয়ে যেতে যেতে আমি শুনতে পাচ্ছি
‘কাদকামাতির সালা’ কাদকামাতির সালা,
ভেসে এসে হামলা পড়লো আমার পতন্মোখ দেহে;
আমি পড়ে যাওয়ার কোনো শব্দ শুনতে পেলাম না।
আসলে ভাসছিলাম আমি ভোরের মতো কোমল মখমলে!
আমার মনে এই বিশ্বাস পোক্ত হয়েছিলো যে সেখানে
কেবল আলোর নাচ,
ভাসতে ভাসতে আমি
একটি সৌরভময় ফলের বাগানে ল্যান্ড করবো,
সেখানে কোনো অন্ধকার নেই,
তবে কেন দেখতে পাচ্ছি না?
আমি নামাজের জন্য তৈরি হবো
এখানে কোনো মসজিদ দেখতে পাচ্ছি না।
অসংখ্য বৃক্ষ আর পাতাদের হাতছানি,
ফিসফিসে স্বরে বাতাসের সাথে ঝগড়া করছে।
আমার কি কোথাও যাওয়ার আছে?
প্রত্যেকটা কবিতাই অসম্ভব ভালো। প্রিয় কবির প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা।
Shohel mahmud
এপ্রিল ০৯, ২০২২ ২১:০৩